দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে তত বেশি ভুয়া, মিথ্যা ও অপতথ্যের বিস্তার ঘটছে। ইতোমধ্যে সমকালসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর পরিবেশন করেছে। গত এক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মিথ্যা ও অপতথ্যের ছড়াছড়ি; নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ভোটার, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ওপর এসবের প্রভাব পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশেও আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপরন্তু বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাচন ঘিরে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ব্যাপক প্রচার দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে শুধু রাজনৈতিকভাবে বিভাজিতই করে না, বরং তাদের মধ্যে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষের এমন বিষ তৈরি করে, যা থেকে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আশঙ্কার বিষয়, আসন্ন নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভুল, মিথ্যা, অপতথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার রোধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
ইউনেস্কোর মতে, আমরা এখন এক ‘ভুল তথ্যযুদ্ধের (ডিজইনফরমেশন ওয়ার) জগতে’ বাস করছি, যেখানে শুধু সামাজিক মাধ্যমগুলো নয়, বরং মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও ভুল, মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এখন সম্মিলিতভাবে মিথ্যা ও অপতথ্যকে তুলে ধরতে গিয়ে ‘তথ্য বিশৃঙ্খলা (ইনফরমেশন ডিজঅর্ডার)’ শব্দবন্ধ পরিচিতি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই তথ্য বিশৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় শিকার হলো তরুণ সমাজ। কারণ এই গোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি এবং তাদের মধ্যে ভুয়া, মিথ্যা ও অপতথ্য কিংবা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে বিভেদ ও সংঘাত তৈরি করা যায়।
বিশ্বব্যাপীই কর্তৃপক্ষ ও রাজনীতিবিদরা সামাজিক মাধ্যমকে প্রচার ও নাগরিক সম্পৃক্ততার সরঞ্জাম হিসেবে যত বেশি গ্রহণ করছে, অনলাইন জগতে তত অতিরঞ্জিত ও অপতথ্যের প্রসার ঘটছে। যুক্তরাজ্যের ‘ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস’বিষয়ক সংসদীয় কমিটির (ডিসিএমএ) প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানুষের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও ভীতি উস্কে দিয়ে নির্বাচনে ভোট ভাগিয়ে নিতে সামাজিক মাধ্যমে ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানোর বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করেছে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ দেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এর পেছনে তিনটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে তরুণ ভোটার সংখ্যার আধিক্য; দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা; এবং তৃতীয়ত, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে ইনফরমেশন ডিজঅর্ডারের বিস্তৃতি, যা তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে বিভেদ ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।