অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের ফলাফল চট্টগ্রামেও প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে। রেললাইন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পর এবার মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হলো।
এ কথা সত্যি, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম যে পরিমাণ উন্নয়ন আশা করেছে তার কাছাকাছিও যায়নি; বরং দিন দিন শহরটি যানজটে এবং জলজটে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই আপত্তি করেন যে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হয়নি। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাণিজ্যিক রাজধানী থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ভারতের মুম্বাই, কানাডার টরন্টো—এ রকম অনেক দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বা নগরী রয়েছে।
একদা চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থেই বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার সম্ভাবনার চূড়ায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাঁদের নিজেদের স্বার্থে এটিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। যেমন বহু বছর ধরেই রেলওয়ের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় অফিস থাকা স্বাভাবিক। বন্দরের মালামাল পরিবহনের জন্য রেল খুবই যথার্থ ব্যবস্থা। রেলকে ধ্বংস করার জন্য নীলনকশার সূচনা হলো রেলের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায় নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় অফিসও এখন ঢাকায়। কাস্টমসের প্রধান ক্ষেত্র হলো চট্টগ্রাম। ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ চট্টগ্রাম নিয়ে গেলে কেমন হয়?
একবার ভেবেছিলাম দেশের ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি চট্টগ্রামে গেলেই ভালো হয়। মুম্বাইয়ের মতো দীর্ঘ একটি সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গেছে, তার পাশে বিস্তীর্ণ জায়গা রয়েছে। এখানে ফিল্ম ও টেলিভিশনের জন্য স্থান সংকুলানের কোনো সমস্যা হতো না। বিপুলসংখ্যক শুটিং কক্সবাজারে এখনো হয়ে থাকে, কিন্তু তা-ও অসম্ভব। কারণ এ ইন্ডাস্ট্রিটি কোনো পেশাদারির চেহারায় রূপ পায়নি। এরপরও সরকার চট্টগ্রামের দিকে নজর দিয়েছে, এটা আশার কথা। কিন্তু ঢাকার সব চেহারা এখন চট্টগ্রামে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
একদা নির্বিঘ্নে এই শহরে আমরা যেতে পারতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় যানজটে বহু সময় লেগে যায়। আর বৃষ্টির দিনে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে জনজীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে প্রাণহানিও ঘটেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক কোনো সমর্থন নেই। প্রতিটি কাজের জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়। রেলব্যবস্থায় ৫২ বছরে যে অগ্রগতির প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। প্রচুর বাসের যাতায়াত বেড়েছে, ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যে শহরগুলো পড়ে, সেই শহরগুলোতে যানজটের একটা ভয়ংকর রূপ দেখা যায়।
শুধু তা-ই নয়, পণ্য পরিবহনের জন্য রেলের পরিবর্তে যে পরিমাণে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যাওয়া-আসা করে তাতে যানজট ও পরিবেশদূষণ একটা নতুন মাত্রা পায়। দেশের নদীপথে পণ্য পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা তৈরি হচ্ছে না। খরচের দিক থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম এবং যাতায়াতটাও যথেষ্ট নির্বিঘ্নে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত খাত নৌ পরিবহনের ব্যবস্থা একেবারেই কতগুলো ফেরি পরিচালনায় সীমাবদ্ধ। নদীগুলো নাব্য করা এবং নদীর সীমানা দখলমুক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাতে আবার ভাটা পড়ে যায়।