কুকুরটাকে মারতে চাইলে আগে বলো এর র্যাবিস (জলাতঙ্ক) হয়েছে। এটা একটা ফ্রেঞ্চ প্রবাদ। অঞ্চলভেদে এটা বিভিন্নভাবে বলা হয়। যেমন কাউকে খারাপ নাম দাও এবং ঝুলিয়ে দাও। সরলভাবে এর মানে হচ্ছে, কাউকে নিপীড়ন করতে চাইলে প্রথমে তার গায়ে কালিমা লেপন করো।
বাংলাদেশে আমরা এমন অপবাদমূলক কৌশলের বিভিন্ন প্রয়োগ দেখেছি। যেমন সর্বহারা রাজনীতিবিদদের গণহারে ডাকাত বলে অভিহিত করা, কারও বেশভূষার ভিত্তিতে তার পরিচয় ঠিক করা, বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপিত করে কারও বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তোলা এবং এসবের সুযোগে বিপদে ফেলা। বাংলাদেশে এর সাম্প্রতিক ব্যবহার হচ্ছে, কাউকে সন্ত্রাসী বা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বলে অপবাদ দেওয়া এবং এরপর নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। নানা আলামত দেখে প্রশ্ন আসতে পারে, গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে তা–ই কি হচ্ছে এখন দেশে?
এদিনের ঘটনাবলির পর, মূলত সরকারের একতরফা বয়ানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভিন্ন দিকে নেওয়া হয়েছে। সরকারের বিবরণ অনুসারে, এদিন বিএনপি নাশকতা করেছে—প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে এবং পুলিশের এক সদস্যকে হত্যা করেছে। সরকার যা এড়িয়ে যাচ্ছে, তা হচ্ছে, এদিনের ঘটনাবলিতে অন্তত একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন (মতান্তরে তিনজন), একজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন, বহু বিএনপি কর্মী আহত হয়েছেন এবং সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরে বিএনপির বিশাল জনসভা পণ্ড করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবরের এই সরকারি ভাষ্য উপস্থাপিত হয়েছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। এর ভিত্তিতে কয়েক দিনের মধ্যে শখানেক মামলা হয়েছে, শীর্ষস্থানীয়সহ বিএনপির হাজার দশেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি কয়েক লাখ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রাখা হয়েছে এবং দু–একটি স্থানে সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী নিহত হয়েছেন।