বাংলাদেশ এই মুহূর্তে শুধু যে গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে তা নয়, সমগ্র জাতি মানসিকভাবেও চরম বিপর্যস্ত। রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকলেও বিরোধী দলগুলোর অহিংস আন্দোলন সামগ্রিক দুশ্চিন্তার মধ্যেও একটি স্বস্তির ভাব বজায় রেখেছিল। ২৮ অক্টোবরের পর সেই স্বস্তির ভাব লোপ পেয়েছে।
বিশেষ করে নির্বিচার ধরপাকড় করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যে আক্রমণাত্মকভাবে একতরফা পথে দৃশ্যত এগোচ্ছে, তার কোনো সন্তোষজনক ও যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা নেই; যদি দেশের স্বার্থই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে থাকে। এর ধাক্কায় বিরোধী দলগুলো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির দিকে এগিয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে।
২৮ অক্টোবরের ঘটনাবলির বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন ছাড়া যেকোনো একতরফা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক অঙ্গনকেই উত্তপ্ত করছে। বিরোধী নেতৃত্ব থেকে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত ঢালাও গ্রেপ্তারের কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাও দেশের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে না।
একতরফা গায়ের জোরে চলার দৃশ্যমান মানসিকতা দেশকে শুধু রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি করছে না, অর্থনীতির সংকটকেও গভীর থেকে গভীরতর করে তুলছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর নাজুক অবস্থা, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় কষ্টের চাপ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবির সুষ্ঠু সমাধান ঝুলে থাকা—সব মিলিয়ে অর্থনীতি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর খাদে ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এই অবস্থা কিছুতেই বাংলাদেশের কাম্য হতে পারে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবারই দায়িত্ব আছে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব তাঁদের, যাঁরা দায়িত্বে আছেন। পরিস্থিতি তাঁদের জন্য কঠিন হলেও বিরোধী দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন সহিংসতার দিকে মোড় না নেয়, এ ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোরও সচেষ্ট থাকা উচিত।