বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের মান কী হবে– জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আগ্রহের কেন্দ্রীয় জায়গায় রয়েছে সেই প্রশ্নটাই এবং আদতে তা ঠিকই আছে। কারণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যৎ এ নির্বাচনের ওপরে বড় আকারে নির্ভরশীল। ২০১৪ ও ’১৮ সালের ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটেছে এবং গত এক দশকে সরকার পরিচালনার সব দিকে জবাবদিহি কাঠামো ও প্রক্রিয়াগুলো ফাঁপা হয়ে গেছে। এ দুই পরিস্থিতি আসন্ন নির্বাচনকে গতানুগতিক রাজনৈতিক ঘটনার চেয়েও উঁচু মাত্রায় নিয়ে গেছে। পরিস্থিতি যা ঘনিয়ে এসেছে, তাতে এ নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক জীবনের সর্বস্তরে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি ফিরিয়ে আনার অন্যতম জানালা এবং চ্যালেঞ্জও বটে।
অর্থনীতির স্বাস্থ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিকাশের দিক থেকেও নির্বাচনের মানের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকে রাজনৈতিক প্রভুদের হাতে ক্ষমতায়িত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপকরা অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের ব্যাপারকে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পৃষ্ঠপোষকতার বদলে গোষ্ঠীতন্ত্রের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার দুর্নীতিগ্রস্ত তরিকায় পরিণত করেছে। ঘনিয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকট সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞ সবার চোখে ধরা পড়লেও অর্থনীতির মূল ম্যানেজাররা এখনও অস্বীকারের মনোভাবে নিমজ্জিত। বাস্তব অবস্থার সাপেক্ষে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার যাত্রাপথে বড়মাপের সংশোধনের দৃষ্টিকোণ থেকেও আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটা নির্বাচন কীসে সুষ্ঠু হয়? ক্ষমতাসীনদের মুখপাত্ররা মনে করেন, তাদের ‘আশ্বাস’ই এ ব্যাপারে যথেষ্ট। যদিও মোটামুটি সবাই এমন ‘আশ্বাস’-এর ওপর ভরসা রাখার ব্যাপারে সন্দিহান। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে নির্বাচন কীভাবে ‘নিরপেক্ষতা হারায়’, সেই আলোচনাই বরং রাজনৈতিকভাবে বেশি অর্থবহ। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কারও বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। গত এক দশকের নির্বাচনী অভিজ্ঞতাই নির্বাচন কীভাবে ‘অনিরপেক্ষ’ হয়, সে ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।