যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এক প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঁচ দিনের বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী, কয়েকজন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে তারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করার পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে। এর অন্যতম হলো আগামী নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে সংলাপের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা।
সংলাপের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হলে প্রথমেই নির্মোহভাবে সেগুলোর পেছনের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। প্রথমে সব দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায়, তথা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে আসা যাক। একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো একতরফা এবং সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে পাস করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। আমাদের সংবিধান ‘উইল অব দ্য পিপলের’ বা ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তির’ প্রতিফলন হলেও পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের ক্ষেত্রে জনগণের কোনোরূপ সম্পৃক্ততাই ছিল না। এতে বিরোধী দলেরও সংশ্লেষ ছিল না। এটি পাসের সময় সংসদে উল্লেখযোগ্য কোনো বিতর্কও হয়নি। এমনকি এটি পাসের ক্ষেত্রে একটি সংসদীয় বিশেষ কমিটির তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রেখেই সংবিধান সংশোধনের সর্বসম্মত সুপারিশ এবং এর সমর্থনে ১০৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মতামতও উপেক্ষা করা হয়েছে।
এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের দেওয়া দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে নিঃশর্তভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত আদেশ অমান্য করা হয়েছে। উপরন্তু এটি পাসের পূর্বে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সর্বসম্মত সুপারিশ নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দেন, যা ছিল ক্ষমতার পৃথক্করণ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের ক্ষেত্রে গণভোটেরও আয়োজন করা হয়নি, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর সুবাদে যা করা ছিল বাধ্যতামূলক। সর্বোপরি, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশকে ‘বিশেষ বিধানাবলি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে সংশোধন অযোগ্য করে একদিকে যেমন সংবিধানের ‘মৌলিক কাঠামো’তত্ত্বকে লঙ্ঘন করা হয়েছে, অন্যদিকে এক সংসদ ভবিষ্যৎ সংসদের সংবিধান সংশোধনের অধিকার হরণ করেছে। তাই পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, এটি একটি অসাংবিধানিক সংবিধান সংশোধনও (প্রথম আলো, ২৮ আগস্ট ২০২৩)।