একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট যখন আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার কথা বলছে, সে সময় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসাবে উপস্থিত হয়েছে। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার হার্ট, কিডনি ও লিভারের মতো অঙ্গগুলো নানাবিধ জটিলতায় আক্রান্ত। তার হৃৎপিণ্ড ও পেটে পানি জমছে। অবাঞ্ছিত এবং জমে যাওয়া এই পানি বের করে ফেলতে হয়। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া না গেলেও বুঝতে কষ্ট হয়নি, তিনি কতটা অসুস্থ। তার লিভারে সিরোসিস হয়ে গেছে। সিরোসিস হলে লিভার পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায় এবং লিভার জীবন রক্ষা করার স্পর্শকাতর ভূমিকাটি পালন করতে পারে না। লিভার সিরোসিস হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি ডায়াবেটিসজনিত কারণে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
প্রায় দুই মাস বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লিভার সিরোসিসের কারণে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড আবারও তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয়। এর আগেও মেডিকেল বোর্ড কয়েকবার এ পরামর্শ দিয়েছে। এবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামিম ইস্কান্দার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ২৫ সেপ্টেম্বর।
খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন নাকচ করে আইনমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনগত মতামত ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এর ব্যাখ্যায় আইনমন্ত্রী সরকারের হাতে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ না থাকায় বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে না বলে দিয়েছেন। এর ফলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে হৃদয়হীনতার অভিযোগ তুলছেন। আইনমন্ত্রীর মতামতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবীদের অনেকে। তারা মনে করেন, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন নজির আছে। তাছাড়া বুদ্ধিদীপ্তভাবে আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করলে ইস্যুটির একটা সমাধান বের হতে পারে।