কাঁটাতারের ওপারে মেঘালয়, এপারে পাহাড়ঘেরা সুনামগঞ্জের বনগাঁও। সীমান্তঘেঁষা এই গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হামিদা বানুর। বাবা লাল মিয়া বয়াতি গানের মানুষ। শৈশব থেকেই বাবার সঙ্গে মেলা, ওরস–মাহফিলে গান করতেন। বাউল শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্যও পেয়েছেন তিনি।
গানের সঙ্গে শৈশব পেরোলেও কৈশোর পেরোতে পারেননি হামিদা। গ্রামের মানুষেরা বলাবলি করতে থাকলেন, ‘মেয়ে বড় হয়েছে; বিয়ে দিতে হবে।’ মাত্র ১৬ বছর বয়সে হামিদার বিয়ে হয়। পাত্র নারায়ণতলা গ্রামের সামাদ উল্লাহর ছেলে শুকুর আলী। বিয়ের পর স্বামী বলে দিলেন, গান-বাজনা চলবে না!
হামিদা বাঁধা পড়লেন সংসারের বেড়াজালে। টানাটানির সংসারে সুর সামলানোর ফাঁকতালে সংগীতে ছেদ ঘটে। বিয়ের বছরই মাকে, পরের বছর বাবাকেও হারান হামিদা। তাঁর জীবনে আনন্দ যোগ করেছিল প্রথম সন্তান সোহেল, জন্মের ছয় মাসের মাথায় মারা যায় সোহেলও।
বহু বছর পর হামিদার সংসারে দ্বিতীয় সন্তান আসে। সন্তানের নাম রাখেন আল আমিন। হামিদার সংসারে অনাহূত অতিথি ছিল ‘অভাব’। ভাতের কষ্টে জর্জর হামিদার সংসার, জীবিকার তাগিদে আড়াই মাসের সন্তানকে বুকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ভারতে কাজ পাওয়া যায়; রোজগারও মন্দ নয়—এমন ভরসায় দিল্লির পথ ধরেন তাঁরা।
শুকুর ও হামিদার পাসপোর্ট নেই। বিএসএফ জওয়ানদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিলেও দিল্লি যেতে পারেননি। পশ্চিমবঙ্গের মালদহে আটকা পড়েন। পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে বহরমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে ঠাঁই মেলে স্বামী-স্ত্রীর। নারী সেলে হামিদা, পুরুষ সেলে শুকুর আলী। আর দুধের শিশু আল আমিনের আশ্রয় মেলে কলকাতায় শুকুরের এক আত্মীয়ের বাসায়। কোলে চড়ে সপ্তাহে সপ্তাহে মা-বাবাকে দেখে যেত একরত্তি আল আমিন।