এই দুঃখজনক বাস্তবতা সম্ভবত আমরা মেনে নিয়েছি যে আমাদের নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই সিদ্ধান্ত দেশের বাইরে থেকে আসবে। এখন আমাদের তাই তাকিয়ে থাকতে হয় ব্রিকস সম্মেলনের দিকে। সেখানে সি চিন পিং বাংলাদেশের প্রতি কতটা বা কোন মাত্রায় সমর্থন দেন, সেই আলোচনা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। অথবা আমাদের জানার চেষ্টা করতে হয়, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সফরের বার্তা কী?
আমাদের মনোযোগ দিতে হয় জি–২০ সম্মেলনের দিকে। সেখানে জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সেলফির গুরুত্ব কতটা, তা নিয়ে তর্কবিতর্কে জড়াতে হয়। মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠকে কী আলোচনা হলো, তা বের করতে আমাদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ কেন বাংলাদেশ সফরে এলেন, কী বলে গেলেন, সরকারের কতটা প্রশংসা করলেন—এগুলো সবই বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
আমাদের চোখ রাখতে হচ্ছে ভারতের পত্রপত্রিকাগুলোর দিকে। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে এখন নিয়মিত বিশ্লেষণ ছাপা হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে এত লেখালেখি এর আগে দেখা যায়নি। নিউইয়র্ক টাইমস কী লিখছে, ফরেন পলিসি কী বলছে, চীন বা রাশিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত সংবাদমাধ্যমগুলো কী বলছে—সবই পড়তে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো না কোনো প্রশ্ন প্রতি সপ্তাহে থাকছেই।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছে প্রথম আলো। সেখানে তিনি বলেছেন, চার দেশের প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। দেশগুলো হচ্ছে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতা থাকলেও এই চারটি দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘জটিল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।