২০২৩ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতির বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে টপকে গেছে। বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বেশি। (জিএনআই হলো জিডিপি ও নিট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মেগাসিটি কলকাতাকে জনসংখ্যার দিক থেকে অনেকখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার জনসংখ্যা এখন দুই কোটি ২০ লাখ, আর কলকাতার জনসংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। এমনকি জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান এখন পশ্চিমবঙ্গের চাইতে বাংলাদেশে বেশি। বাংলাদেশের নারীর প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ির আঙিনার বাইরে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। দেশের দ্রুত বিকাশমান তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই শ্রমিকদের ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী, যার সিংহভাগই গ্রাম থেকে এসে শহরে কর্মসংস্থান বেছে নিয়েছে। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক অবস্থানের এসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাতে কর্মসংস্থান তাদের বঞ্চনা ও চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে এক নদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং চরম দারিদ্র্যকবলিত দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। সুতরাং, ওই পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে এগিয়ে ছিল। বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাংলাদেশের মানুষের চাইতে জীবনযাত্রার মানে আরও এগিয়ে ছিল।
’৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক যে এক কোটি ৫০ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত, তাদের ৯০ শতাংশ গ্রামের মানুষ। তাদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে সচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির চাইতে অনেক বেশি গতিশীল হয়ে উঠেছে।