২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর আজ। আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ঘটনাটির আলোচনা খুব প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সংঘটিত জঙ্গি হামলার মধ্যে সবচাইতে নৃশংস ছিল সেটি। সেদিন জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সময় প্রকাশ্যে এ হামলা হয়। ওই হামলায় অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও দলটির তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হন।
এটি কোনো আকস্মিক আক্রমণ ছিল না। আমরা জানি, ৯০-এর দশকের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উদ্ভব হয়। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির ওপর হামলা হয় ২০০১ সালে। আমরা দেখেছিলাম, বামপন্থি এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনের ওপর হামলা হচ্ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, এগুলো সরকারকে দুর্বল করা বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বিরোধী দলের চেষ্টার অংশ। এমনকি ২১ আগস্টের এই হামলার ক্ষেত্রেও বলা হয়, এটি আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে যখন সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা হয়, তখন এটি ঢেকে রাখার কোনো উপায় ছিল না। আন্তর্জাতিক চাপে সরকার তখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। ততদিনে কিন্তু বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বাংলাদেশে গেড়ে বসে।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বেরিয়ে আসে কীভাবে রাষ্ট্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয়, এ হামলার পেছনে রাষ্ট্রের যোগসাজশ স্পষ্টও। জঙ্গি সংগঠন হুজি, লস্কর-ই-তৈয়বার মতো সংগঠনগুলো হামলার নেতৃত্বে ছিল। পাকিস্তান থেকে যে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল– সেগুলোর প্রমাণও আমরা পেয়েছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার রায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এতে স্পষ্ট, সে সময় নিরাপত্তার ভার যাদের ওপর ছিল– স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন প্রধানরা তাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।