ইলিশ এমন এক মাছ, তা যেভাবেই রান্না করে খাওয়া হোক না কেন, স্বাদে কোনো পরিবর্তন আসে না। তা সেটা কালিজিরা ফোড়নই হোক বা দই-পোস্ত। একেক অঞ্চলে একেক রকমভাবে ইলিশের রান্না হয়। এপার বাংলা-ওপার বাংলার ইলিশ রান্নাতেও অনেক পার্থক্য। ওপার বাংলায় শর্ষে ইলিশেও দই, পোস্তবাটা দেওয়া হয়। ইলিশের ঝোলে বেশির ভাগ সময় দেওয়া হয় কালিজিরার ফোড়ন। আমাদের এখানে ইলিশ রান্নায় পেঁয়াজবাটার ব্যবহার একটু বেশি।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক বন্ধু একবার আমার বাসায় বেড়াতে এল। হোটেল তাজ বেঙ্গলের মূল পরিচালকদের একজন তিনি। ইলিশ খাওয়াব শুনে বলছিল, ‘তোমরা তো পেঁয়াজ দিয়ে ইলিশ মাছের স্বাদটাই নষ্ট করে ফেলো।’ মোটা মোটা করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে ভাপা ইলিশ আর পেঁয়াজবাটা দিয়ে ইলিশের ঝোল রেঁধে খাওয়ানোর পর সে বলেছিল, ‘ওহ মাই গড। ইটস টু টেস্টি।’ তাকে বললাম, ‘তোমাদের হিন্দু পরিবারে পেঁয়াজ খাওয়ার প্রচলন কম, তাই তোমরা ওভাবে রাঁধো। আমাদের মুসলিম পরিবারে পেঁয়াজ দিয়ে একটু গ্রেভি খাওয়ার প্রচলন বেশি।’
দুই বাংলায় ইলিশ রান্নার পদ্ধতি আলাদা হলেও স্বাদের কিন্তু কমতি নেই। মাচায় ঝোলা যে সবজি হয়, সেটা দিয়ে ইলিশ রান্না বেশি জমে। তা ছাড়া ইলিশের লেজ, মাথা, ডিমের স্বাদও কম নয়। ব্রিটিশরা ইলিশের স্বাদ ও গন্ধ বজায় রাখতে ইলিশ মাছকে স্মোকড করে খেত। তাদের হাত ধরেই এই অঞ্চলে স্মোকড ইলিশের প্রচলন শুরু হয়। ইলিশ স্মোকড করে খাওয়ার আরেকটি কারণ ছিল, তারা মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারত না। স্মোকড ইলিশ রান্নার পদ্ধতিগত কারণেই মাছের কাঁটা খুব নরম হয়ে যেত। আর ইলিশে আছে ওমেগা-৩, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলকে রোধ করে। যে কারণে ব্রিটিশরা এই মাছ খেতে ভালোবাসত।