ফয়েজ আহ্মদ। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’। প্রগতিশীল পাঠাগার ‘সমাজতান্ত্রিক পাঠাগার’-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রথম প্রধান সম্পাদক অকৃতদার এই কবি ও ছড়াকার মারা যান ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। অতীতের সঙ্গে অধুনার সংযোগ ঘটাতে চিন্তা পাতায় ছাপা হলো তার লেখা উপসম্পাদকীয়
রাজনৈতিক উত্থানপতন ও গুরুত্বপূর্ণ কর্ম তৎপরতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত কর্মরত সাংবাদিকগণ কোনো কোনো সময় এমন সমস্ত লঘু ঘটনা ও অভিজ্ঞতার আস্বাদ লাভ করেন, যার জন্যে ঈর্ষা করা যেতে পারে। ঈর্ষা হবে না কেন? কোনো ভদ্রলোককে যদি মন্ত্রী হতে বলার পরই তিনি আনন্দে উৎফুল্ল ও নিকট ভবিষ্যতে পদচ্যুতির ভয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন পদকম্পনের মাধ্যমে এবং তাঁকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করার জন্যে কম্বল দিয়ে চেপে রাখতে হয়, তবে নিশ্চয়ই সেটা উপভোগ করার মতো দৃশ্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান আমল থেকেই ষড়যন্ত্র, প্রবঞ্চনা ও সত্য নয় এমন অনেক ঘটনার মধ্যেও সচেতন, সুস্থ ও প্রগতিশীল তৎপরতার অভাব ছিল না; তবুও সে ক্ষেত্রে অপমানজনক ও হাস্যকর ঘটনারও কমতি নেই।
সাম্প্রতিককালের গুলি, হত্যা, ষড়যন্ত্রের রূপই আলাদা। তবে সে আমলেও যে পরোক্ষ জীবননাশ (মি. জিন্নাহ্ ও প্রকাশ্য হত্যা মি. লিয়াকত আলী ১৬ অক্টোবর ’৫১) হয়নি, তা তো নয়। সে ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় বাঙালিরা বন্দুক হাতে না নিয়ে শ্রেণীচরিত্র অনুযায়ী তোষামোদের রাজনীতি করতে গিয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়ও সৃষ্টি করেছেন। পঞ্চাশের যুগটাই ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং করাচির প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি। মূলত প্রতিক্রিয়াশীল শুধু হননি, নিজেরাও অনেক ক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিলেন। অবশ্য পশ্চিমা আমলা সম্প্রদায় ও পূর্ব বাংলার উচ্চাভিলাষী কতিপয় আমলার সহযোগিতায় কেন্দ্র ষড়যন্ত্রকারী ক্ষমতাবান রাজনীতিকগণ অতি সহজেই এঁদের অবদমিত রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের শিরোমণি এক এক পর্যায়ে এক এক মহারথী ছিলেন। চুয়ান্ন সালের যাঁর বুদ্ধি ও মেধা এ ব্যাপারে সবার চাইতে প্রখর ছিল, তিনি যুক্ত ভারতের একাউন্টস সার্ভিসের প্রাক্তন অফিসার ও পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী বড়লাট গোলাম মোহাম্মদ। এই কূটবুদ্ধিসম্পন্ন বৃদ্ধের শাসনকালেই যে দু’জন জবরদস্ত সেনাপতির তরবারি ঝলসে ওঠে, তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা ও জেনারেল আইয়ুব খান। এই ইস্কান্দার মীর্জা, মূলে মুর্শিদাবাদের কোনো বংশজাত, ব্রিটিশ সরকারের লাঠিয়াল হিসেবে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের স্বাধীন চেতনাসম্পন্ন পাঠান ও পাখতুনদের দমন করার জন্য পলিটিক্যাল এজেন্ট নিযুক্ত হয়েছিলেন। পাঠান সর্দারদের দুর্নীতিপরায়ণ করার জন্য তাঁকেই প্রধানত দায়ী করা হতো। ঘুষদানে সিদ্ধহস্ত এই কঠোর শাসক পাঠান সর্দার ও জির্গার নেতাদের একাধারে ঘুষ ও হুমকির মুখে শাসন করতেন। তাঁকেই যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে পূর্ব বাংলার পরোক্ষ সামরিক শাসক নিযুক্ত করেন গোলাম মোহাম্মদ ।