অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। টানা বারান্দায় পাতা বেঞ্চিতে বসে আছেন বয়স্ক নারী ও পুরুষেরা। কেউ চা খাচ্ছেন, কেউ আবার মুড়ি কিংবা পিঠা। তাঁদের একজন রানী আহমেদ (৭২) বললেন, ‘আমার নিজের ইচ্ছায়, নিজের সিদ্ধান্তে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। ভালো আছি। ঈদে আনন্দ পেয়েছি, তবে এ আনন্দ একাকিত্বে ভরা।’
গাজীপুর সদর উপজেলার বিশিয়া কুরিবাড়ি এলাকার বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকেন রানী আহমেদ। বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার দিন সেখানে রয়েছেন ১৬৮ জন নারী-পুরুষ। খতিব আবদুল জাহিদের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে বয়স্কদের পুনর্বাসনের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
রানী আহমেদ শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। তাঁর স্বামী ছিলেন প্রকৌশলী। আবুধাবিতে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁদের দুটি মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ছোট মেয়ে ঢাকায় স্বামীর বাড়িতে আছেন। রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় তাঁদের একটি বাড়ি ছিল। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর বাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা করেছেন। পরে ছোট মেয়ের ঢাকার বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। কিন্তু আবদ্ধ পরিবেশে থাকতে পারছিলেন না। খোঁজ নিয়ে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসেছেন। এখানে তিনি এক বছর ধরে আছেন।
বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বারান্দায় একাকী বসে চোখ মুছছিলেন মমতাজ বেগম (৭০)। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানায়। তবে এখন ঠিকানা বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের এই মা চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ঈদে খাবারের তো অভাব নাই। কিন্তু একটাই দুঃখ, আপন মানুষগুলা থাইকাও কাছে নাই। জীবনে এ রকম পরিণতি হবে, জানা ছিল না।’
মমতাজ বেগম বলেন, তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর কিছুদিনের মধ্যে মারা যান স্বামীও। দুই ছেলের মধ্যে ছোটজন মাঝে মধ্যে খবর নেন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তাঁরা স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। দুই বছর আগে বড় ছেলে তাঁকে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে যান।