আমাকে স্বীকার করতে হবে চাকরিগত কারণে এত বছর পরও বিমানের সঙ্গে আমার আবেগ জড়িয়ে আছে; বিমানের ভালো ও মন্দে আমি আনন্দিত ও বিচলিত হই।
আমি একাধিকবার বলেছি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গণতান্ত্রিক কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠানও নয়, প্রিয়ভাজনদের পুনর্বাসনের কর্মক্ষেত্রও নয়। বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত একটি লিমিটেড কোম্পানি, আকাশ পরিবহনসেবা লক্ষ্য হলেও লাভ-লোকসানের হিসাবটিই এর মূল চালিকাশক্তি। যেসব কারণে কোম্পানি দেউলিয়া হয় এবং বিলুপ্ত হয় তা বিমানের বেলাতেও প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হলেও যেকোনো লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে ক্রমাগত ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখার ম্যান্ডেট সরকারকে জনগণ দেয়নি।
আমার সীমাবদ্ধতার কথাই আগে জানাই। বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনের প্রায় ৫২ বছরের ইতিহাসে ন্যূনতম পেশাদারত্বের অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও এবং অনভিজ্ঞতার কারণে আমার অসম্মতির পরও আমাকে দেশের প্রধান আকাশ পরিবহনকারী এয়ারলাইনস বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রায় দেড় যুগ আগে আমি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। এ পদে যোগদানের আগে আমার কিছু সাধারণ ব্যবস্থাপনা জ্ঞান থাকলেও দু-একবার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সফর করা ছাড়া আকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত কিংবা প্রযুক্তিগত কোনো বিষয়েই আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাকে আকাশ পরিবহনের অ আ ক খ দিয়েই কাজ শুরু করতে হয়েছে। আড়াই বছরের বেশি সময় কাজ করতে করতে কিছু শিখেছি, সে শেখাটা একজন প্রধান নির্বাহীর যেটুকু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা দরকার তার চেয়ে অনেক কম। আমার চাকরিকালীন আমি যেসব এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে পরিচিত ছিলাম টিম ক্লার্ক, জেমস হোগান, উইলি ওয়ালস কিংবা তেমেল কোটিল বা চু চুন সেঙ্গ অথবা ইদরিস জালাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার তুলনায় আমার অভিজ্ঞতা একেবারেই অনুল্লেখ্য। আমি দায়িত্বরত অবস্থায়ও বলেছি, এখনো বলছি, টিম ক্লার্কের মতো পেশাদার ব্যক্তিকেই এ ধরনের পদে বসানো উচিত। আকাশে এক টুকরো বাংলাদেশ কিংবা ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার যেভাবেই বর্ণনা করি না কেন বিমান যে একটি ‘ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান’ এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।