গত ৩০ এপ্রিল সমকালে লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদের ‘জেনোসাইড ৭১ : স্বীকৃতি, বাধা ও অর্জন’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। নিবন্ধে তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জান্তা সরকার কর্তৃক তাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ) অধিবাসী ‘বাঙালি’ জাতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার হীন মানসিকতায় যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তার স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্তির একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। সঙ্গে ‘জেনোসাইড’-এর স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে কী কী বাধা রয়েছে এবং কীভাবে এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা যায়, সে ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। হাসান মোরশেদের সঙ্গে আমার মৌলিক কোনো দ্বিমত নেই। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশয় ও বিভ্রান্তি দূর করে কীভাবে ‘জেনোসাইড’-এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাধা-বিপত্তি এড়ানো যায়, তার উপায় নিয়ে বর্ধিত একটি আলাপ বলা যায় আমার এ কথাগুলোকে।
জেনোসাইড বলতে একটি জাতি, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণগত কিংবা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে নিম্নবর্ণিত যে কোনো কর্মসাধনকে বোঝাবে: গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা; গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন; উদ্দেশ্যমূলক গোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এমন কিছু আরোপ, যা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে এর কাঠামোগত ধ্বংস বয়ে আনবে; গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মধারা রোধ করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা আরোপ এবং গোষ্ঠীর শিশুদের বলপূর্বক অন্য গোষ্ঠীতে চালান দেওয়া।
আমরা দেখি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক সরকার বাংলাদেশের জনগণের ওপর উপরোল্লিখিত সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। মূলত জেনোসাইড তত্ত্বের জনক রাফায়েল লেমকিন গ্রিক শব্দ ‘জেনোস’ (জাতি, উপজাতি) এবং লাতিন শব্দ ‘সাইড’ (তথা হত্যা, যেমন হোমিসাইড, ফ্রাটিসাইড ইত্যাদি) যুক্ত করে ‘জেনোসাইড’ শব্দবন্ধটি তৈরি করেছেন। অন্যদিকে যে কোনো কারণ সে রাজনৈতিক হোক কিংবা দলগত বা ব্যক্তিগত– একাধিক ব্যক্তিকে একই সময়ে একই জায়গায় হত্যা করাকে বলা হয় ‘গণহত্যা’। গণহত্যায় পূর্বপরিকল্পিত ‘জেনোসাইড’-এর মতো কোনো ইচ্ছা থাকে না। তাই ‘জেনোসাইড’ বোঝাতে কখনোই তার স্থলে ‘গণহত্যা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ‘জেনোসাইড’-এর স্বীকৃতি পেতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।