বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ মে ব্যাংকের সদর দপ্তরের ভেতরে যখন অনুষ্ঠান চলছিল, তখন বাইরে চলছিল প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক কদর্য ঘটনা। এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের বলেই আমি মনে করি।
কোনো দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি না দেখে একে দেখতে হবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে। কারণ এটা দেশের স্বার্থ ও ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। কে দেশ শাসন করছেন, কোন দল দেশ শাসনে আর কে বিরোধী দলে, সেটা মূলত আপেক্ষিক বিষয়। কারণ সবার ওপরে দেশ। দেশের সম্মান যখন ভূপাতিত বা প্রশ্নের মুখে, তখন নাগরিক হিসেবে বা দ্বৈত নাগরিক হিসেবেও আমাদের আবেগ-অনুভূতি আহত হয় বৈকি।
আমরা বিদেশে বসবাস করার কারণে খুব ভালো করে জানি, বাংলাদেশিরা কতটা পরিশ্রমী। কতটা খাটেন তাঁরা। কীভাবে কষ্ট করে জীবনযাপন করেন। দূর থেকে আরাম-আয়েশ মনে হলেও মূলত প্রবাসজীবন কষ্টের। নিজের কাজ নিজে করার সমাজে মানুষকে পরিশ্রম করতে হয় ব্যাপক। এই পরিশ্রমী মানুষজন কেন মারমুখো হলেন? কেন তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল? এর উত্তর খোঁজা কঠিন কিছু না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ প্রতিবাদ করে। তাদের আচরণ যদি অস্বাভাবিক হয়ে যায় বা অন্যায়ের পথ ধরে, তখন আমরা বিস্মিত হওয়ার পাশাপাশি হতাশায় ভুগি। যা ঘটেছে বা যা কিছু হয়েছে তাকে আমলে নিয়ে এর একটা দীর্ঘমেয়াদি সুরাহা এখন জরুরি।
কথায় কথায় আমরা পাকিস্তানিদের মাথা গরম, উগ্র বলে রায় দিই। এই পাকিস্তানিরাও তাঁদের সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে এমনটা করেন বলে শুনিনি। ভারতীয়রা তো নয়ই। কারণ দেশের মৌলিক সমস্যা আর ভাবমূর্তির বেলায় তাঁরা এক। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। মৌলিক বিষয়ে মতভেদ এতটাই প্রকট যে বাংলাদেশিদের জাতীয় অস্তিত্বই এখন ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। এটা সুখের কিছু নয়। বাদ, প্রতিবাদ, বিদ্রোহ মানুষের অধিকার। তা করতে গিয়ে যখন পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন উভয়ের সহনশীলতা কাম্য। কাম্য—আচরণে শিষ্টতা। সেটা আমরা দেখিনি। সরকারি বা বিরোধী দলের কেউ মনে রাখেননি যে এর ফলে আমাদের দেশের সম্মান পড়বে বিপদের মুখে।