পাকিস্তান উন্নয়ন অর্থনীতি ইনস্টিটিউট (পিআইডিই) ১০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পর ১৯৬৪ সালের শেষের দিকে করাচিতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসে (পিআইডিই) যোগ দিই। তখন পর্যন্ত এর পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদদের হাতে। তাঁরা প্রধানত পাকিস্তান সরকারকে দেওয়া ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অনুদানের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অনুদানের শর্ত ছিল, ইনস্টিটিউটের নেতৃত্ব কোনো পাকিস্তানিকে গ্রহণ করতে হবে। এই ইনস্টিটিউটের নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক, এমন কোনো উচ্চ প্রশিক্ষিত পশ্চিম পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ ছিলেন না। কারণ, এটা ছিল একটা আধা সরকারি ছোট গবেষণা ইনস্টিটিউট, যার প্রশাসন বা নীতিনির্ধারণে কোনো দৃশ্যমানতা ছিল না। যে কারণে একজন পূর্ব পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদকে বাছাই করা হলো, যিনি স্বনামধন্য মার্কিন অর্থনীতিবিদদের কাছেও সুপরিচিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে পিআইডিই আলাদা ছিল। কারণ, এখানে কোনো পড়ানোর কাজ ছিল না, শুধুই গবেষণা। বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ, সাহায্য ইত্যাদির মতো আমার আগ্রহের বিষয়ে গবেষণা করার জন্য পর্যাপ্ত রসদ আমার আওতাধীন ছিল।
আমার আগের বিদ্যায়তনিক পরিবেশের তুলনায় এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। এখানে নামীদামি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই-তিন বছরের জন্য আবাসিক অর্থনীতিবিদেরা থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার ফলে এবং আমাদের পারস্পরিক আগ্রহের বিষয়ে দৈনন্দিন আলোচনা ও বিতর্ক থেকে আমি লাভবান হতে পারতাম। এ ছাড়া সেখানে স্বল্পমেয়াদি অনাবাসিক পণ্ডিতেরা আসতেন। তার বাইরে, কিছু স্বনামধন্য বিদেশি অর্থনীতিবিদ যেমন জ্যান টিনবারজেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্টিন রবিনসন, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের লয়েড রেইনল্ডস এবং অন্যদের সমন্বয়ে একটি বিদেশি উপদেষ্টা দল ছিল, যারা একটানা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এসে থাকত এবং আমাদের গবেষণা কর্মসূচি ও প্রকাশনার ওপর পর্যালোচনা, মন্তব্য ও পরামর্শ দিত।
একই সময়ে করাচিতে নীতিনির্ধারণ-বিষয়ক একটি অতিরিক্ত বিদেশি গবেষক দল ছিল, যার মধ্যে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনে সংযুক্ত হার্ভার্ড উপদেষ্টা দল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সাহায্য মিশনের বেশ কিছু অর্থনীতিবিদ ছিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ননীতিতে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিল।