বিতরণ পাইপলাইনের বেশুমার ছিদ্রপথে ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকার প্রতিবেশে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার অদৃশ্যপূর্ব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ভোলায় একটি অনুসন্ধান কূপে (ইলিশা-১) গ্যাস পাওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে সুখবর। এ সুখবরটি পাওয়া গেছে গত শুক্রবার। অবশ্য সেখান থেকে এমন খবর আসাটাই প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, ওখানে যে গ্যাস আছে, সে বিষয়ে বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে আগেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। বাকি ছিল শুধু সেখানকার ভূগর্ভে চার কিলোমিটারের মতো গর্ত খুঁড়ে গ্যাসের স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো। সে কাজটিও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন ওই কূপে ‘স্টেম টেস্ট’সহ কিছু বিশেষায়িত কারিগরি কর্মকাণ্ড শেষে ওখানে গ্যাসের প্রাপ্যতা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে স্পষ্ট করে জানা যাবে। সে জন্য হয়তো সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।
ইলিশা-১ কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর এখন ভোলায় গ্যাসকূপের সংখ্যা দাঁড়াল ৯। এবার ৩টি কূপ খনন করেছে রাশিয়ার কোম্পানি গাজপ্রম। এর আগে ৬টি কূপ খনন করেছে বাপেক্স নিজে। সরকারের প্রাথমিক হিসাবে এই ৯টি কূপে মোট গ্যাস রয়েছে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের (টিসিএফ) মতো। তবে বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এই ৯টি কূপে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।
বর্তমানে দেশে প্রতিবছর গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১ টিসিএফ। ভোলা গ্যাসক্ষেত্রটি বাপেক্সই আবিষ্কার করেছিল প্রায় ২৬ বছর আগে। প্রথমে গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছিল ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে। এরপর তা দ্বীপটির উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত—ভোলার দক্ষিণে মনপুরাসহ বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলো এবং মেঘনা নদীবক্ষেও বিপুল গ্যাসের মজুত রয়েছে। এসব এলাকায় নিবিড় অনুসন্ধান চালানো দরকার।
দুই
ইলিশা-১ অনুসন্ধান কূপে গ্যাস পাওয়ার খবরে আমরা আরও বেশি উচ্ছ্বসিত হতে পারতাম যদি কূপটি বাপেক্স খনন করত। এ রকম একটি কূপ খনন করার জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল, অর্থ সবই বাপেক্সের ছিল। কিন্তু কাজটি বাপেক্স নিজে করেনি। তার ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করেছে রাশিয়ার কোম্পানি গাজপ্রম। ফলে আমাদের বাড়তি প্রাপ্তি হয়েছে কিছু বাড়তি অর্থ ব্যয়। বাপেক্স নিজে কাজটি করলে বড়জোর ব্যয় হতো ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার। আর গাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে ২১ মিলিয়নেরও কিছু বেশি (৩টি কূপের জন্য ৬৩ দশমিক ৫৮৫২১৮ মিলিয়ন ডলার)।