দেশ এখন যেন আগুনে পুড়ছে। একদিকে খরা, তাপপ্রবাহ, আরেক দিকে জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দাম। শহর-নগর-গ্রামে উত্তাপ, বাজারেও উত্তাপ। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি।
সৌদি আরব, দুবাই, কাতার বা আরব দেশের শহরগুলোর তাপমাত্রা যখন ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওদিকে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা টানা কয়েক দিন ধরে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। আমরা যেন নরককুণ্ডে বসবাস করছি। যদিও ঈদের দু-তিন দিন আবহাওয়া খানিকটা ঠান্ডা ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
বৈশাখে প্রকৃতি তপ্ত হয়। এটা আবহমানকাল ধরেই হচ্ছে। কিন্তু দিন দিন তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকা ও রাজশাহীর অধিবাসীরা রীতিমতো মরুভূমির মতো লু হাওয়ার অনুভূতি পাচ্ছে। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
পৃথিবীজুড়েই উষ্ণায়নের যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল, সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। কয়েক বছর ধরেই দেশের মেগাসিটিগুলোতে উত্তাপের বহর বাড়ছিল হু হু করে। ঘরবন্দী হয়ে থাকার সুযোগ কিছু ভাগ্যবান মানুষের কপালে জুটলেও বেশির ভাগ গরিব-মধ্যবিত্ত কিংবা দিন আনি দিন খাই ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের জন্য তা আকাশ-কুসুম কল্পনা। ফলে এমন তাপের দহনে পুড়ে মরা ছাড়া যেন আমাদের জীবনে অন্য কোনো যৌতুক নেই।
প্রশ্ন হলো, কেন এই অসহনীয় তাপমাত্রা? কেন ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় রাজধানী? ইতিমধ্যে স্বীকৃত যে জলবায়ুর এই বিষম গতি বাড়ছে বিকৃত এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে উষ্ণায়নের হাত ধরে। এখন দেশের ৩ শতাংশ জায়গাজুড়ে থাকা শহর-শহরতলি এলাকায় থাকে দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ, যারা তৈরি করছে দেশের ৬৩ শতাংশ সম্পদ। ভৌগোলিক মাপের নিরিখে নগরায়ণের বিপদের উৎসস্থল মাত্র শহুরে ৩ শতাংশ এলাকায় হলেও পরিবেশ দূষিত হয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে শহরের সীমা ছাড়িয়ে জেলা-গ্রামগঞ্জ—সর্বত্র। রাজধানী ঢাকাও এমন বিষম উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। যত মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে, তত চাপ বেড়েছে তার পরিবেশের ওপর। অল্প জায়গায় অনেক মানুষের মাথা গোঁজার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। গত ২০-২৫ বছরে ঢাকা শহরে নির্মাণ ক্ষেত্রের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ১০ বছরে শহরের সবুজ অংশের পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ।