সারাদেশে প্রচণ্ড দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। সারাদেশেই গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা।
Advertisement
ঘরের বাইরে বের হলেই ঘেমে টেমে অস্থির। এদিকে রমজান মাস হওয়ায় দিনের বেলায় পানিও খাওয়া যায় না। ফলে শরীর থেকে সব পানি বের হয়ে যাচ্ছে।
এতে করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাপদাহে হিট স্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা দীর্ঘসময় রোদে থাকেন তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। দীর্ঘ সময় গরমে থাকায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়।
শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা হয়, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে, লাল র্যাশের মতো দেখা দেয়, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, গরমে খুব প্রয়োজন না হলে রোদে যাওয়া যাবে না। শ্রমিক যারা কাজ করেন তাদের কিছু সময় পরপর ছায়ার মধ্যে আসতে হবে। বিশ্রাম নিয়ে তারপর আবারও কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা মাথায় কাজ করতে হবে। যারা রোজা রাখবে তাদের ইফতারের পর প্রচুর পানি ও শরবত খেতে হবে।
প্রতিকার
*ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
*লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, বিশেষ করে স্যালাইন খেতে হবে।
*রোজার পর কিছুক্ষণ পর পর পানি খেতে হবে।
*ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো।
বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না।
আক্রান্ত হলে করণীয়
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। এসি থাকলে চালু করে শুইয়ে রাখতে হবে। অথবা ফ্যানের বাতাস দিতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস ও ডাবের পানি পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতেও পরামর্শ দেন তিনি। নতুবা বড় ধরনের বিপদ এমনকি রোগী মারাও যেতে পারেন।
শিশুদের সুরক্ষার বিষয়ে প্রথিতযশা এই চিকিৎসকের পরামর্শ হচ্ছে—গরমে শিশুদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।