বঙ্গবাজার ও নিউ সুপারমার্কেট উভয় স্থানেই আগুন লাগার সময়টা কাছাকাছি। অর্থাৎ ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। রমজান মাস, ঈদের বেচাকেনা চলছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা গভীর রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় যান, সেহরি খেয়ে নামাজ পড়ে যে সময়টায় ঘুমাতে যান, তখনই খবর পান তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে। এ ধরনের দুঃসংবাদ ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন বেদনার, আমাদের জন্যও আতঙ্কের।
কিছুদিন পরপর কেন বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে? বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে সিগারেট বা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। মশার কয়েল থেকে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বনানী কাঁচাবাজারে মশার কয়েল থেকে আগুন লেগে কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আমরা ভুলে যাইনি।
পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর নাশকতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। নাশকতা করে কার লাভ? নিউমার্কেটের কথাই যদি বলি, তাহলে ওখানে ফুটপাতের দোকানিদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। তাঁদের মার্কেটের দোকান মালিকরা তাড়া দিচ্ছিলেন। এখন ভেতরের ব্যবসায়ীরা ভাবতে পারেন বাইরের দোকানদাররা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এমনটি ঘটিয়ে থাকতে পারেন। এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এটি খুবই দূরবর্তী কারণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক নাশকতার উদ্দেশ্যে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে কোন পক্ষ ফায়দা লুটবে? সরকারি কিংবা বিরোধী দল কোনো পক্ষই এ ধরনের ঘটনা সৃষ্টি করে জনমত তৈরি করতে পারে না। ফলে চিলে কান নেওয়ার পেছনে না ছুটে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। নাশকতার জন্য আগুন লাগানো হলে এক স্থান থেকে আগুনের সূত্রপাত হতো না। তিন-চার স্থান থেকে আগুনের সূত্রপাত হতো।
স্বীকার করতে হবে, আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা রয়েছে। সরু সড়ক হলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দুর্ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। বঙ্গবাজার ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের একেবারে কাছে, নিউমার্কেটও বেশি দূরে নয়। এরপরও আগুন নিয়ন্ত্রণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। কারণ কাপড় বা রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।
মনে রাখতে হবে, আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নিবারণ আলাদা বিষয়। নিয়ন্ত্রণ মানে হচ্ছে– আর ছড়াবে না। অনেক সময় দেখা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণের পরও জ্বলতে থাকে। নিবারণে দু’এক দিন সময় লাগে। বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরও দু’দিন ধোঁয়া বের হচ্ছিল। নিউমার্কেটের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। কাপড় দাহ্য বস্তু। তাই এ আগুন নিবারণে সময় লাগে। কাপড়চোপড়ের আগুনে যতই পানি দেওয়া হোক না কেন, তা গভীরে যেতে সময় লাগে। এটিকে ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা বলার সুযোগ নেই।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি দল নিউমার্কেট ও গুলিস্তান পাতাল মার্কেট পরিদর্শন করে বলেছিল, সেসব মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। তখনই যদি প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো নিউ সুপারমার্কেটের আগুন এড়ানো যেত। বঙ্গবাজারে ঘুম ভাঙেনি বলেই নিউমার্কেটে আগুন।