প্রতি বছর প্রাক-বাজেট আলোচনা যখন অর্থমন্ত্রী শুরু করেন তখন গভীর আগ্রহের সঙ্গে আলোচ্য নিয়ম বোঝার চেষ্টা করি। এবারো তা-ই। অর্থমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন সংগঠিত গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কাগজে তার খবর নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। হতাশার কথা, এসবের মধ্যে নতুন কিছু পাচ্ছি না। অর্থনীতিবিদরা তাদের কথা বলে যাচ্ছেন যথারীতি, যা তারা আগেও বলতেন। খুব বেশি নতুনত্ব খোঁজার কোনো কারণ পাই না। আর এদিকে ব্যবসায়ীসহ অন্যরা যা বলছেন, তাতে একই কথার পুনরুক্তি দেখতে পাচ্ছি। কর কমাতে হবে।
তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। রফতানি বিঘ্নিত হবে। কর্মসংস্থান হবে না। অতএব ট্যাক্স কমাও, ভ্যাট কমাও, আয়কর কমাও, শুল্ক-কর কমাও। অগ্রিম আয়কর কমাও। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কথায় শুধুই আশঙ্কার কথা এবং তা শুনিয়ে করের বোঝা কমানোর আবেদন। বোধ করি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব শুনে এবার একটু ‘বিরক্তই’। এটা বুঝলাম কী করে? বুঝলাম তার একটা উক্তি থেকে। তিনি আক্ষেপ ও দুঃখের সুরে বলেই ফেললেন, সবাই যদি কর কমানোর কথা বলেন তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে কোত্থেকে? খুবই ন্যায্য কথা। কর কমাও, কর কমাও ঠিক আছে। তাহলে কর বাড়ানোর বুদ্ধি দেবে কে? এমনিতেই তো গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারের নীতির কারণে কর ও জিডিপির অনুপাত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর থেকে উদ্ধার কোন পথে? এটা আর আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। আমাদের ও বিশ্বের ‘উদ্ধারকর্তা’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) এবার তা ধরেছে। মাত্র, মাত্র সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বদলে তারাও বলছে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। কোন বছর কতটুকু বাড়াতে হবে তাও বলে দিয়েছে তারা। এখন কী করা? এটা তো বাধ্যবাধকতা—চুক্তির বিষয়।