শিমের একধরনের প্রজাতির নাম গোয়ালগাদ্দা। সিলেটের গোলাপগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় এমন প্রজাতির শিম কৃষকেরা উৎপাদন করছেন। এর মধ্যে বিষমুক্ত উপায়ে ‘গুড এগ্রিকাল প্র্যাকটিস টেকনোলজি’ ব্যবহার করে নিরাপদ পদ্ধতিতে উৎপাদিত এক হাজার মেট্রিক টনের বেশি গোয়ালগাদ্দা শিম প্রতিবছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গোয়ালগাদ্দা শিম ছাড়াও প্রতিবছর অন্তত ৮০০ মেট্রিক টন জারা লেবু যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর বাইরে নাগা মরিচও কৃষকেরা রপ্তানি করছেন। আর এসব সবজি কৃষকেরা পুরোটাই চাষ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ নিরাপদ পদ্ধতিতে।
সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা এবং ২ থেকে ৩ ইঞ্চি প্রস্থের গোয়ালগাদ্দা শিম খেতে সুস্বাদু। ফলে বিদেশেও এ শিমের চাহিদা আছে। গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় এ শিমের চাষাবাদ হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে এসব শিম কিনে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবরই সিলেটে নানা ধরনের সবজি চাষ হয়। গত কয়েক বছর ধরে অনেক কৃষক বিষমুক্ত ও কীটনাশকবিহীন সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকে সবজি উৎপাদনে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করছেন। ফল ছিদ্রকারী পোকামাকড় রোধে কীটনাশক ব্যবহার না করে অনেক কৃষক ‘সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ’ বা ‘লিউর’ পদ্ধতি অনুসরণ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে লিউর পদ্ধতি একধরনের ফাঁদ। এ পদ্ধতিতে স্ত্রী পোকার নিসৃত গন্ধকে কৃত্রিমভাবে রাখা হয়। এ গন্ধে আকর্ষিত হয়ে পুরুষ পোকা এসে ফাঁদে থাকা সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়। পুরুষ পোকার মৃত্যুর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি রোধ করা হয়। কীটনাশক ব্যবহার না করে লিউর পদ্ধতিতে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে চলতি বছর শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদিত হয়েছে ৪১ হাজার ৫২০ হেক্টর। জেলার উৎপাদিত সবজির মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শাকসবজি উৎপাদনে কৃষকেরা এখন লিউর পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এর ফলে এসব সবজি উৎপাদনে কোনো কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে না।