গত ২৫ জানুয়ারি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ যে মন্তব্য করেছেন, তা হচ্ছে- 'দ্য নেমস অব নটোরিয়াস হ্যাবিচুয়াল ডিফল্টারস ওয়ার অ্যাবসেন্ট ফ্রম দ্য লিস্ট'। এর অর্থ হলো, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া কুখ্যাত ঋণখেলাপিদের নাম তালিকা অনুপস্থিত। মন্তব্যটি দেখে মনে পড়ছে আমার একটি সাম্প্রতিক গবেষণা গ্রন্থের কথা। ২০১০ সালে প্রকাশিত 'আ প্রোফাইল অব ব্যাংক লোন ডিফল্ট ইন দ্য প্রাইভেট সেক্টর ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের গ্রন্থটি সেই সময় বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। অনেকটা যেন মৌচাকে ঢিল ছুড়েছিল।
ওই গবেষণায় 'হ্যাবিচুয়াল ডিফল্টারস'কে আমি 'উইলফুল ডিফল্টারস' আখ্যায়িত করেছি। যার বাংলা অর্থ হলো 'ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি'। এর মানে, এই রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিরা রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে এতই প্রভাবশালী যে, তাঁরা ব্যাংকের ঋণ ফেরত না দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, সরকার বা দেশের বিচারব্যবস্থা তাঁদের শাস্তি দিতে পারছে না। এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বছরের পর বছর ঋণখেলাপি হয়ে বহাল তবিয়তে তাঁরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা গৃহীত ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার করে ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপাতি কিনে তাঁদের পরিবারের প্রায় সবাইকে বিদেশে অভিবাসী করে ফেলেছেন।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া ১৯৯৭ সালে এক কোটি টাকার বেশি ঋণগ্রস্ত যে ২ হাজার ১১৭ জন ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে পেশ করেছিলেন, ওই তালিকার বৃহত্তর এক হাজার ঋণখেলাপি থেকে ১২৫টি নমুনা বাছাই করে আমরা গবেষণাটি পরিচালনা করেছিলাম। আমি তখন ডেপুটেশনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক।
১৯৯৯ সালের মে মাসে গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে আমাদের একটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি ঋণ নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে তুলাধুনা করেছিলেন। কিন্তু তখনকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অসহযোগিতায় আমাদের গবেষণা ভণ্ডুল হওয়ার উপক্রম হয়। অনেক দিন গবেষণা বন্ধ রাখার পর 'রিসার্চ মেথডলজি' পরিবর্তন করে 'কেস স্টাডি মেথড' ব্যবহার করে আমরা দীর্ঘ বিলম্বের পর গবেষণাটি সম্পন্ন করে ২০১০ সালে বই হিসেবে প্রকাশ করি। বইটি অতি দ্রুতই বিক্রি হয়ে যায়।