মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক বলয়ে ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যতই হোঁচট খাচ্ছে, তুরস্ক ততই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানকে আঙ্কারা ‘তুর্কি বিশ্ব’ বলে মনে করে। তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল এটিকে একসময় ‘এক জাতি, ছয় রাষ্ট্র’ বলে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অবশ্য সাংস্কৃতিক বন্ধনকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে জ্বালানিকেই মূল কেন্দ্রে রেখেছেন।
তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের মৈত্রী এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তুর্কি বলয়ের রাষ্ট্রগুলোর কোনো সংগঠনের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও তুর্কমেনিস্তান আঙ্কারার মধ্য এশিয়া কৌশল বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করবে। গত মাসেও এরদোয়ান বিষয়টিকে রাখঢাক না করেই বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস কাসপিয়ান সাগর হয়ে শিগগিরই তুরস্কে পৌঁছাবে।’
তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এলাকা হলেও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতের ক্ষেত্রে বিশ্বে চতুর্থ। রাশিয়া, ইরান ও কাতারের পরই দেশটির অবস্থান। চীন এখন তুর্কমেনিস্তানের গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আঙ্কারার উদ্দেশ্য হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত তুর্কমেনিস্তান থেকে জ্বালানি গ্যাস কিনে তুরস্ককে প্রাকৃতিক গ্যাসের আঞ্চলিক হাবে পরিণত করা।
সেটা কীভাবে হবে? রাশিয়া, আজারবাইজান, ইরান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আমদানি করে মজুত করবে তুরস্ক। সেই গ্যাস তারা ইউরোপে রপ্তানি করবে। নীতিগতভাবে তুরস্কের এই কৌশল সমর্থন দেবে ক্রেমলিন। কেননা নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপে আর খুব বেশি দিন গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না। এরপরও তুরস্কের জ্বালানিকৌশল রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে।