মানবদেহে ঈশ্বরপুত্রের অবতার হওয়ার বিষয়টি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় পাপ থেকে মানুষের পরিত্রাণের লক্ষ্যে ঈশ্বরের পবিত্রতা ও প্রেমের কথা। কোনো বাস্তব প্রমাণ ছাড়া কি করে বোঝা যাবে যে ঈশ্বর প্রেমময়? মানুষের পাপমুক্তির জন্য ঈশ্বর তাঁর শাশ্বত জীবনদায়ী বাণীকে তথা তাঁর পুত্রকে মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দানরূপে পাঠিয়েছেন। সাধু যোহন লিখেছেন, ‘আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ। ’ খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে ঈশ্বরের সৃজনশীল পবিত্র বাক্যের মানবদেহ ধারণ এই ধর্মবিশ্বাসের কেন্দ্রীয় শিক্ষা।
যিশুর অন্য সব আশ্চর্য কাজকে এ বিশ্বাসের আলোকেই দেখতে হয়। স্রষ্টা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন পাপপ্রবণ মানুষের মুক্তির জন্য এ জগতে তিনি অলৌকিকরূপে জন্মগ্রহণ করেন : একমাত্র পাপের অভিজ্ঞতা ছাড়া তিনি অন্য মানুষের সব অভিজ্ঞতাকেই বরণ করে নিয়েছেন। স্রষ্টা সৃষ্টিরূপে এলেন সৃষ্টিকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
মানুষের কোনো বিদ্যা, জ্ঞান ও দর্শনের সাহায্যে এ রহস্য উদঘাটন করা যায় না। প্রকৃতির নিয়মবহির্ভূত এমন ঘটনা তথা খ্রিস্টের ‘Incarnation’-কে একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বিশ্বাসে ও জীবনের প্রকৃত অর্থের অন্বেষায়ই আমরা বুঝতে পারি। শাশ্বত স্রষ্টা পিতা পবিত্র আত্মার প্রভাবে পুত্রকে কুমারীর গর্ভে রক্ত-মাংসের দেহে জন্ম নিতে তিনি তাঁকে এই মর্ত্যে পাঠিয়েছেন। তিনি অলৌকিকভাবে গর্ভস্থ হন, হন প্রাকৃতিক নিয়মের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ। যিশুর ঈশ্বরত্ব ও মানবত্ব—এই উভয় স্বভাবের এ একটি দিক। ঈশ্বর তাঁরই আপন আত্মিক সত্তা ও গৌরববিশিষ্ট পুত্রেই মানুষের কাছে এসেছেন; লক্ষ্য এই, যেন মানুষ ঐশ্বরিক আলোকে আলোকিত হতে পারে। চিরন্তন সে আলো খ্রিস্টে মূর্তিমান হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘সমস্ত অন্ধকার ভেদ করে যে আলোর প্রকাশ সে আলো নয় ক্ষণিকের সদ্য প্রভাতের, সে আলো চির নতুন প্রভাতের। ’