‘অবশেষে যখন অন্ধ ও বধির রেফারি যুদ্ধের ইতি টানে, একটি যথোপযুক্ত বাঁশির ফুঁ পরাজিত দলকে ক্ষান্তি দেয়। তখন বিজয়ী পক্ষের জনতা ময়দানে প্রবেশ করে যুদ্ধনিনাদে ১১ জন বীরকে কাঁধে তুলে নেয়, যাদের রক্ত, ঘাম, অশ্রু, তিতিক্ষা আর মহাকাব্যিক সংগ্রামে বিজয় অর্জিত হয়েছে। এবং আমাদের অধিনায়ক, আমাদের পিতৃভূমির গৌরবের পতাকা, যেই পতাকা কখনো শত্রুরা আর কলঙ্কিত করতে পারবে না, তা জড়িয়ে মহান কাপটিতে চুমু দেয়। এ চুমু পরম গৌরবের।’
ফুটবল খেলাকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে তার ইতিটা এভাবেই টানলেন এদুয়ার্দো গালিয়ানো। উরুগুয়ের এই লেখক, সাংবাদিক, বিপ্লবীর লেখা সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অনন্য এক দলিল। এবারের বিশ্বকাপ চলাকালে গালিয়ানোর সেই বই সহকর্মী ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ ফায়েজ আহমেদের অনুবাদে প্রকাশ করে প্রথমা প্রকাশন।
ফ্রান্সের সঙ্গে মহাকাব্যিক এক ফাইনাল ম্যাচে রক্ত, ঘাম, অশ্রুতে মোড়ানো আর্জেন্টিনার অনন্য এক বিজয়গাথা এবং বিশ্বকাপ ট্রফিতে লিওনেল মেসির পরম গৌরবের চুমুর কথাই যেন বলে গেলেন গালিয়ানো।
আর্জেন্টিনার তিন যুগের অপেক্ষার অবসানে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার বহুমাত্রিক প্রকাশ দেখলাম সেদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। নীল–সাদা পতাকা হাতে গোটা রাজধানীর অসংখ্য মিছিল যেন সেখানে এসে মিলিত হচ্ছিল। এ যেন গালিয়ানোর বর্ণনা করা বিজয়ী পক্ষের সেই জনতা। কিন্তু যারা ১১ জন বীরকে কাঁধে তুলে নিতে না পারার ব্যর্থতা থেকে রাতের নিস্তব্ধতা কাঁপিয়ে দিচ্ছিল উল্লাসময় চিৎকার, ভুভুজেলার আওয়াজ আর আতশবাজির কানফাটা শব্দে। মেসি–দি মারিয়াদের জয়ে এ এক অন্য রকম রাত দেখল যেন বাংলাদেশ।