ভবিষ্যদ্বাণী, হিসেব-নিকেশ ও জল্পনা-কল্পনার অবসান মাঠেই দেখিয়ে দিয়েছেন এমবাপে-জিরুদরা। দাপুটে শুরু করে রেকর্ডের পিঠে রেকর্ড গড়ে এসেছেন শিরোপার মঞ্চে। লুসেইল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রোববার রাত নয়টায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের শিরোপা ধরে রাখার মিশন।
তার আগে দেখে নেয়া যাক কোন পথে ফাইনালের মঞ্চে এসেছে ফ্রান্স-
গ্রুপপর্বে দাপুটে শুরু
চোট এবং অসুস্থতার ফাঁদে পড়া ফ্রেঞ্চ দল নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন চলছিল। বিংশ শতাব্দীর বিশ্বকাপে ঘটে চলা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলের পরের আসরে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের ঘটনা ঘটে চলছিল। কিন্তু ফ্রান্স সেই তালিকায় ব্যতিক্রম হতে চলেছে তার প্রমাণ প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপুটে শুরু করে দিয়েছেন এমবাপে-জিরুদরা। প্রথম ম্যাচ দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা জিতে নেয় ৪-১ ব্যবধানে।
সবার আগে শেষ ষোলো নিশ্চিত
বিশ্বকাপের আমেজ তখনও খুব একটা জেঁকে বসতে পারেনি। ফ্রান্সের বাদ পড়া নিয়ে তখনও আলোচনা। কিন্তু সব থামিয়ে দিয়ে গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলে হুগো লরিসের দল। গত কয়েক আসরে ধারাবাহিকভাবে একই দৃশ্য হয়ে থাকা ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রথম রাউন্ডেই বিদায়’ পাল্টে দেয় ফ্রান্স এক ম্যাচ হাতে রেখেই।
বেঞ্চের শক্তি, আবার আলোচনা এবং হার
আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন কোচ দেশম। তাতে ঘটে হিতে বিপরীত। তিউনিশিয়ার কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বড় অঘটনে পড়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলটি। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে শুরুর একাদশে নয়টি পরিবর্তন আনেন ফ্রান্স কোচ। গোড়ালির চোটে বেঞ্চে ছিলেন কাইলিয়ান এমবাপে। অধিনায়ক হুগো লরিসও ছিলেন না।
শেষ ষোলোতে এমবাপে ঝলক
কাইলিয়ান এমবাপে যেন সব রেকর্ড ভেঙে দেয়ার মিশনে নেমেছিলেন। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এসেই পেয়ে যান পঞ্চম গোল। ফ্রান্সের হয়ে একাধিক বিশ্বকাপে চারটি বা তার বেশি করে গোল আগে কেউ করতে পারেননি। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেই কীর্তিই গড়েছেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটের টিকিটও নিশ্চিত করে দিদিয়ের দেশমের দল।
ফেভারিট ইংলিশদের থামিয়ে আরও সামনে ফ্রান্স
সেনেগালকে হারিয়ে শেষ আটে আসা ইংলিশরা দুর্দান্ত ফুটবল দেখিয়েও জিততে পারেনি। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটির পেনাল্টি ইস্যুতে বিতর্ক হতে পারে, প্রশ্ন উঠতে পারে রেফারির ভূমিকা নিয়েও। ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেনও আক্ষেপ করতে পারেন, সব হিসেব-নিকেশ ছাপিয়ে আল বাইত স্টেডিয়ামে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
শেষ চারে মরক্কোর দাপুটে ফুটবল এবং ফ্রান্সের ইতিহাস
ম্যাচের ফল দেখে ঠিকঠাক বিচার করা হয়ত যাবে না, ফ্রান্স-মরক্কোর ফাইনালে ওঠার লড়াইটি তর্ক সাপেক্ষে কাতার বিশ্বকাপেরও সেরা লড়াইয়ের একটি। ফ্রান্সের বিপক্ষে সমানে সমান লড়াই চালিয়েছিল মরক্কো।
এমবাপে-জিরুদদের আক্রমণ সামলে জিয়েচ-আমরাবাতরা ত্রাস ধরিয়ে দিয়েছিল ফরাসি রক্ষণ দুর্গেও। কখনও হুগো লরিস কখনও ফিনিশিংয়ের অভাব, জালের দেখা শুধু মেলেনি।
এবং ফাইনাল…
শিরোপার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সামনে লড়ে টানা দ্বিতীয় ‘সোনালী ট্রফি’ উঁচিয়ে ধরার অপেক্ষায় এমবাপে-গ্রিজম্যানদের ফ্রান্স।