করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার অনেক বছর আগে থেকেই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বনাশের বীজটি রোপণ করা হয়। অঙ্কুরের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, সময় পরিক্রমায় ওই অনাকাক্সিক্ষত বীজটি দীর্ঘদিনে এখন অনেকটাই পত্র-পুষ্প-ফল ও শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে। যাদের ওপর শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও দেখভাল করার দায়িত্ব, তাদের দায়িত্বহীনতা-উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা এবং উলটো যাত্রা বিগত তিন দশকে সর্বনাশের প্রক্রিয়াটিতে জলসিঞ্চন করায় দিনে দিনে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। হয়তো ইচ্ছা করে কেউ করেননি; কিন্তু কেউ স্বীকার করুন আর না করুন-বাস্তবে সবার সামনেই এমন বীজ বোনার কাজটি হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ আমলে আমি যাব না। পাকিস্তান আমল, এমনকি আমাদের স্বাধীনতার পর সত্তর কিংবা আশির দশকে যাদের জন্ম, তাদেরও বলে সহজে বোঝানো যাবে না যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উচ্চশিক্ষার ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর বর্তমানে কী ত্রাহি অবস্থা! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাশ কোর্সে এখন সব শাখাতেই (কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের তিন বছরে মোট ২১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয় (প্রথমবর্ষে ৭০০, দ্বিতীয়বর্ষে ৭০০ ও তৃতীয় বা চূড়ান্ত বর্ষে ৭০০ নম্বর)। অর্থাৎ আশি কিংবা নব্বই দশকের তুলনায় একেবারে দ্বিগুণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি নম্বরের পরীক্ষা সফলভাবে মোকাবিলা করে তবেই একজন শিক্ষার্থীকে পাশ কোর্সের স্নাতক (গ্র্যাজুয়েট) হতে হচ্ছে। একই ভাবে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সের ক্ষেত্রেও একই কথা। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকাকালীন মোট ১৫০০ নম্বরের (অনার্স ৯০০ + সাবসিডিয়ারি ৬০০) আগের সেই সিলেবাস এখন আর নেই। মেজর ও নন-মেজর বলে কথিত ৩২০০ নম্বরের বিষয়, পত্র বা কোর্সের পরীক্ষা মোকাবিলা করে তবেই সম্মানসহ স্নাতক হওয়া যায়। এর মানে, পাশ কোর্সের মতোই অনার্সেও দ্বিগুণ বা এরও বেশি নম্বরের পরীক্ষা গ্রহণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।