কিংডম অব কঙ্গো। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জোসেফ মবতুর আমলে অর্থনৈতিক অবক্ষয় ও পাহাড়সম দরিদ্রতার অভিজ্ঞতা লাভ করে। তারপর আসেন লরেন্ট কাবিলা। তিনিও একই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। জনগণ গরিবানায় থাকলেও মবতু অবিশ্বাস্য রকমের ধনী ছিলেন। তাঁর প্রাসাদে সুপারসনিক কনকর্ড বিমান অবতরণের বড় বিমানবন্দরও ছিল। কথা হলো, এ রকম একজন ডিক্টেটর কি চাইতে পারতেন না, তাঁর দেশ যথাসম্ভব ধনী হয়ে উঠুক? দেশ আরও ধনী হলে তিনি কি আরও ধনী হতেন না? কনকর্ড বিমান ভাড়া করার বদলে কিনতে পারতেন। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো টাকাওয়ালাদের আরও বেশি টাকাওয়ালা হতে সহযোগিতা করত না? কঙ্গোবাসীর উন্নতির অনুপাতে মবতু, কাবিলা ও অভিজাতদেরও কি উন্নতি হতো না?
তবু কেন এ রকম ক্ষমতাধরেরা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়তে চায় না? কেন বহুত্ববাদী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয় না? ‘হোয়াই নেশনস ফেল’ গ্রন্থে লেখকেরা বলছেন, না, এটা হয় না। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতাধরদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকেই শক্তিহীন করে দেবে। অসম্ভব করে তুলবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা, যা তাদের নিজস্ব স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, রেডিও-টেলিভিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিণত করা, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণায় অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা, জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সব আইন বাতিল করা—এগুলো ছিল স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ৮ দল, বিএনপির ৭ দল ও বামপন্থীদের ৫–দলীয় মোট তিন জোটের রূপরেখার দাবি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই কথা রাখেনি। কেন এ রূপরেখা বাস্তবায়নে তাদের বাধ্য করা গেল না?
তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো রক্তের বিনিময়ে ও সংসদে আইন পাস করেই করা হয়েছিল। এরশাদ উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতগুলোকে যথাক্রমে বিভাগে ও উপজেলায় নিয়েছিলেন সংবিধান সংশোধন করেই। কিন্তু সেটা আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে। সামরিক সরকারগুলোর করা সব সংশোধনীও আদালত বাতিলের রায় দিয়েছেন।