দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বরাবরই সেরা পারফরম্যান্স আসে কৃষি খাত থেকে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের অনুপাতে আদায়ের হারের দিক থেকে কৃষির অবস্থান প্রতি বছরই শীর্ষে। এমনকি কভিডের প্রাদুর্ভাবজনিত অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের মধ্যেও কৃষি খাত থেকে ঋণের অর্থ আদায় হয়েছে বিতরণের চেয়ে বেশি। গ্রাহক হিসেবে কৃষকরা সেরা হলেও এখনো দেশের কৃষি জিডিপির বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও অনেক নিচে।
এ মুহূর্তে দেশের কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়ানোর অবশ্যম্ভাবিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ (এফএও) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, আগামী বছর দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবেলার ওপর জোর দিচ্ছেন নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা। যদিও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অর্থায়ন না বাড়ালে কৃষি উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব না।
এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজার এখন অস্থিতিশীল। সারসহ কৃষি উপকরণের বাজারও ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও কৃষি উৎপাদনের খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষকের অর্থায়ন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি কোনোকালেই ভালো অবস্থায় ছিল না। স্বাধীনতার পর অর্ধশতকের বেশি সময় পার হলেও এখনো খাতটির মোট উৎপাদনের বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা যায়নি। ব্যাংকগুলোও কৃষক বা ক্ষুদ্র গ্রাহকদের পরিবর্তে বড় গ্রাহকদের ঋণ বিতরণেই আগ্রহী। এ মুহূর্তে কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবে বড় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভর্তুকির পাশাপাশি স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কৃষকের অর্থায়ন বাড়ানো না গেলে উৎপাদন বাড়ানো এক প্রকার অসম্ভবই হয়ে পড়বে।