শাহজিবাজার রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে কমলাপুর এসেছিলেন; শাহজালাল মেইলে হাফটিকিটে ভাড়া লেগেছিল সাড়ে তিন টাকা। সেটাই ছিল জীবনের প্রথম ট্রেনে চড়া, প্রথমবার ঢাকায় আসা। ৩৫ থেকে ৩৬ বছর আগের কথা সেটা। এর পর থেকে ঢাকাতেই জীবিকা, তবে এ শহরে ‘জীবন’ থিতু হয়নি তাঁর। শিকড় এখনো গ্রামে পোঁতা, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউকে।
কেন এ মহানগর মো. খোরশেদ আলম তালুকদারের হলো না? নব্য যৌবনে এসে বার্ধক্যের সীমানায় পা রাখার পুরোটা সময় তো কাটল এখানে; এরপরও স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া হলো না তাঁর। কেননা, এ শহরের বাসযোগ্যতা সবচেয়ে বড় মাপকাঠি ‘টাকা’। যার টাকা আছে, এ শহর যেন শুধু তাঁর। যদিও নাগরিক সেবা-পরিষেবার নিরিখে এর অবস্থান সারা বিশ্বের সব রাজধানী শহরের তুলনায় তলানিতে।
খোরশেদ আলম যা আয় করেন, তাতে কোনোমতে টিকে থাকা যায়, ‘টেকসই’ হওয়া যায় না! এ কারণে সাড়ে তিন দশক পার করেও ঢাকায় তাঁর বসতি হয়নি। খোরশেদ আলমরা ঢাকায় থেকেও তাই ‘ঢাকাবাসী’ নন।
প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই খোরশেদ আলম শরবত বেচেন। তাঁর ভাষায়, ‘উপকারী’ শরবত; গ্যাস-অম্বলের দুশমন, কোষ্ঠকাঠিন্যের মহৌষধ! শরবতে ব্যবহার করেন ১২ ধরনের উপকরণ। ইসবগুলের ভুসি, কালিজিরা, তোকমা, তালমাখনা, সাদা তিল, অর্জুন গাছের ছাল, শিমুলের মূল, কাতিলা, শুকনা বেল, আখের গুড়, ঘৃতকাঞ্চন ও উলটকোমর।
খোরশেদ আলম বলেন, শুধু উপকারীই নয়, তাঁর শরবতের স্বাদও ভালো। যাঁরা একবার খান, তাঁরা বারবার তাঁর কাছে আসেন। এ কারণে ফার্মগেইট এলাকায় যে স্থানে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সে স্থানটি তিনি ছাড়তে চাননি। কেননা, চলতি পথের মানুষের চেয়ে চেনা খরিদ্দার ছিল বেশি। তবে মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর তাঁকে সরতে হয় সেখান থেকে। এর পর থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা জায়গা খুঁজে নিয়েছেন। এতে করে তাঁর বিক্রিবাট্টা আগের চেয়ে কমেছে।