পোশাক মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে যার বেশ কিছুটা যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের সামাজিক রীতিনীতি ও চর্চার প্রতিফলনও পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। তাই প্রয়োজনের পাশাপাশি পোশাক কখনো কখনো জাত-পাত, পরিচয়, মর্যাদা, ক্ষমতা ও লৈঙ্গিক বিভাজন ইত্যাদির পরিচয় হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য এর কোনোটাই সর্বজনীন নয়। পারস্যের কবি শেখ সাদি মধ্যযুগে পোশাকের গুণের কথা গল্পের মাধ্যমে শুনিয়েছিলেন। তার গল্পটা আপাতদৃষ্টিতে সাদাসিধে, যেখানে সাধারণ পোশাকে তার যোগ্য সমাদর না হওয়ায় তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে অভিজাত পোশাকের কারণে সেই একই বাড়িতে তার অভ্যর্থনার ধরনও বদলে গিয়েছিল। এতে তিনি আপ্যায়ন করা খাবারের একটা অংশ তার পোশাকের পকেটে ঢুকিয়ে ছিলেন এই বিবেচনায় যে খাবারটা তার পোশাকেরই প্রাপ্য। নিঃসন্দেহে এটা ছিল পোশাকি সমাজের প্রতি তার তীব্র প্রতিবাদ। কিন্তু এই গল্প কতটুকু আমাদের শেখাতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সম্প্রতি লুঙ্গি পরিহিত এক সিনেমাদর্শক পোশাকের কারণে সিনেমা হলে ঢুকতে পারেননি। পরে অনেককেই লুঙ্গি পরিধান করে এর প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে লুঙ্গির সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেছেন। যদিও এর উদ্দেশ্য খুব একটা পরিষ্কার না কিন্তু এখানে প্রতিবাদটাই মুখ্য। শুধু পোশাক নিয়েই নয়, পোশাকের সঙ্গে পরিচ্ছদ ও এর ধরন নিয়েও অনেক আলোচনা বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর মতো অবস্থায় চলে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর প্রকাশ ঘটে সহিংসতা ছড়ানোর মধ্য দিয়ে। কিছুদিন আগে রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকায় একজন শিক্ষিকাকে কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশ বাহিনীর সদস্যের হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছিল। সে ঘটনারও প্রতিবাদ করেছিল সচেতন মহল এবং দোষী ব্যক্তি শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিল। পোশাক নিয়ে আমাদের যেমন প্রত্যাশা আছে একই সঙ্গে পোশাকের প্রচলিত ধ্যানধারণাভিত্তিক পোশাকি সংস্কৃতি বিনির্মাণ নিয়েও চেষ্টার অন্ত নেই। পোশাকেও নির্দিষ্ট মানদণ্ড, চর্চা ও রীতি মানা বা না মানা যেন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে; এমনভাবে সেটা ঘটে যে ব্যক্তির স্বাচ্ছন্দ্য ও পছন্দের বিষয়টি যেন অনেক দূরের বিষয়। কোনটা দেশি, কোনটা বিদেশি এ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের শেষ নেই। বিজ্ঞজনেরা এই বিতর্ককে সময়ের অপচয় বলছেন।