ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে বিমর্ষ মুখে বসে ছিলেন রুনা আক্তার। চার ঘণ্টা আগে তাঁর ছোট বোন আসমা আক্তার (২২) মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম সন্তান।
রুনা প্রথম আলোকে বললেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আসমার মৃত সন্তানের জন্ম হয়। ছয় দিন আগে তাঁর বোন প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ জন্য বোনের স্বামীকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে একটা দিনও ওর জামাই ডাক্তারের কাছে নেয়নি।’
গত ৩১ মে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের সামনে রুনার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
হাসপাতালের নিবন্ধন অনুযায়ী, আসমার মৃত সন্তানের বয়স ছিল ৩২ সপ্তাহ বা আট মাস। মায়ের গর্ভে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে সরকারি ৫৮৬টি হাসপাতালে আসমার সন্তানের মতো দিনে গড়ে ৩৭টি মৃতশিশু জন্ম নিচ্ছে। দেশে নবজাতক মৃত্যুর দুই–আড়াই গুণের বেশি জন্ম হচ্ছে মৃত শিশু। সাধারণত মায়ের গর্ভে ২৮ সপ্তাহ পূর্ণ করার পর কোনো শিশু মারা গেলে সেটিকে মৃতজন্ম বা মৃত প্রসব বলা হয়। এ সময়ের আগে গর্ভে শিশুর মৃত্যুকে গর্ভপাত বলা হয়। তবে কোনো কোনো সংজ্ঞায় ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভে থাকার পর মৃত শিশুর জন্ম হলে মৃতজন্ম বলা হয়।
মৃত শিশুর জন্মের কারণ
মৃত শিশু জন্মের কারণ সম্পর্কে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা মায়ের বয়স ১৬ বছরের কম ও ৩৫ বছরের বেশি হলে, মায়ের স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও সংক্রমণ থাকলে, ৪২ সপ্তাহের বেশি বিলম্বিত গর্ভধারণ হলে, প্রসবপূর্ব সেবা, গর্ভকালীন পুষ্টি ও যত্নের ঘাটতি হলে এবং প্রসবের সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মৃত শিশু জন্মের ঝুঁকি থাকে।
অধ্যাপক ফেরদৌসী বলেন, দেশে মৃতজন্মের হার বেশ বেশি। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এখনকার তুলনায় ৬ থেকে ৮ গুণ বেশি পদক্ষেপ নিলে মৃতজন্ম, নবজাতক মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু প্রত্যাশিত হারে কমবে। সন্তান প্রসবের সময়ে হাসপাতালে না আনা এবং হাসপাতালে আনার পর নিরাপদ প্রসবের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রসব প্রক্রিয়ার একদম শেষ পর্যায়ে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মৃতজন্মের ঘটনা ঘটে।