স্বাধীনতার পরে দেশের সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প পদ্মা সেতু নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। বিশেষ করে প্রকল্পের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলায়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে তাও দুই মাস পেরিয়ে গেছে। এখন আবার পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের খোঁজে কমিশন গঠনের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
খবর হলো, ২০১২ সালের জুনে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি বাতিলের পেছনের ‘কুশীলবদের’ খুঁজতে শিগগিরই কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। যার প্রধান হবেন একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। গত ৩০ আগস্ট কমিশন গঠনের সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এর আগে এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সেতু বিভাগের মতামত চায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাদের বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের কার্যক্রম গ্রহণ করা সমীচীন হবে না বলে মত দেয় সেতু বিভাগ। আর তদন্তের বিষয় ও প্রকৃতি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করা যেতে পারে বলে মত দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ (আইন ও বিচার) বিভাগ। ১৯৫৬ সালের কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ৪ ও ৫ ধারা অনুযায়ী, এই কমিশন একটি দেওয়ানি আদালত হিসেবে গণ্য হবে। কমিশন যেকোনো ব্যক্তিকে ডাকতে পারবে, সাক্ষী, দলিল এবং তথ্য-প্রমাণ গ্রহণ করবে।
সেতু উদ্বোধনের তিন দিন পর গত ২৮ জুন এর নির্মাণের বিষয়ে যাঁরা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে সরকারকে কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন অব ইনকোয়ারি গঠন এবং দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নতুন এ কমিশন পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের তথ্য জাতির সামনে উন্মুক্ত করবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। আর পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করতে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য আওয়ামী লীগের দাবি থাকবে বলে জানান দলটির সভাপতি-মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান।
তবে এ বিষয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথাই নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথাব্যথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে। পদ্মা সেতুর কমিশন করল কি করল না, এটা আমাদের কাছে কনসার্ন (উদ্বেগের) না। এখন দরকার হচ্ছে, তারা চুরি করেছে সেই দুর্নীতির জন্য বিশেষ কমিশন, সেটা তো এ সরকার দিয়ে হবে না।
সেটা জনগণ করবে।’ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনেই যাচ্ছি না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে। তাই এগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ নাই।’