অনূর্ধ্ব-১৭ দলে আছে ২০-র ফুটবলার। এটা দেখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে কাঠগড়ায় তোলার উপায় নেই। পাসপোর্ট অনুযায়ী ২০-তে খেলা ফুটবলারদের বয়স ১৭-র নিচে, তাই তাদের নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ ফুটবলে রওনা হচ্ছেন টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি। বয়সের আনুষ্ঠানিকতায় সব ঠিক থাকলেও খটকা লাগছে মানসিকতায়।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ খেলা ফুটবলারদের যখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়, তখন তাঁদের পেছনে টেনে ধরা হচ্ছে! ২০-র খেলোয়াড়দের অনূর্ধ্ব-১৭-তে টেনে না আনলে দলে দেখা যেত আরো কিছু নতুন মুখ, তাতে সম্ভাবনাময় ফুটবলারের সংখ্যাও বাড়ত। কিছুদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্ট খেলে রানার্স আপ হয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। ওই দলের ৯ জন ফুটবলার আছেন সদ্য ঘোষিত অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। এই ৯ জনের জায়গায় কি নতুনদের সুযোগ দেওয়া যেত না? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলির ব্যাখ্যা, ‘অনূর্ধ্ব-২০ দল থেকে যাদের নিয়েছি, তাদের আরো গেম-টাইম দরকার।
ঢাকায় অক্টোবরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের বাছাই পর্ব আছে, এ জন্য তাদের ভালো প্রস্তুতি দরকার। এ ছাড়া তাদের বয়স আছে, সবাই খেলতে পারবে। ’ বয়স নিয়ে তো প্রশ্ন নয়, তাদের জায়গায় নতুন প্রতিভা নিলে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলারের মোট সংখ্যাটি আরো বড় হতো। ‘একাডেমিতে যারা আছে, তাদের ওপরই আমি ভরসা রাখছি। টুর্নামেন্টে আমাদের ম্যাচ জিততে হবে’, বলেছেন ইংলিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। এই জয়ের নেশায়ই একই খেলোয়াড়কে দেখা যায় বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে। তাতে খেলোয়াড় পুল আর বড় হয় না। সিনিয়র পর্যায়ে ভোগে বাংলাদেশ দল। মেয়েদের ফুটবলেও একই চেহারা—জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের দেখা যায় বয়সভিত্তিক দলের জার্সিতে। তাই বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সফল মেয়েদের বিবর্ণ দেখায় জাতীয় দলে। পল স্মলির এই মনোভাব এবং ২০-এর ফুটবলারদের ১৭-তে দেখে অবাক হয়েছেন অনেক কোচ। বাফুফের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চান না তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কোচের সন্দেহ, ‘পল সব জানেন, বোঝেন, স্রেফ ট্রফি জেতার নেশায় তিনি এই ভুলগুলো করছেন। অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলা ফুটবলারদের বয়স থাকলেও ১৭-তে খেলানোর কোনো যুক্তি নেই। এটা বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক নয় যে আমার শক্তিশালী দল নিয়ে যেতে হবে। ’ নিচ থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার ওপরই জোর দিতে চান এই দেশি কোচ, ‘এখন ট্রফির দিকে না তাকিয়ে সারা দেশকে বিবেচনায় নিয়ে ইয়ুথ ফুটবল ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম দাঁড় করানো উচিত। এটা ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। ’ পলের দেশ ইংল্যান্ডের ইয়ুথ ফুটবল সিস্টেম বিশ্বের অন্যতম সেরা। সেটির আধুনিকায়ন হয়েছে হাওয়ার্ড উইলকিনসনের হাতে। তিনি ১৯৯৭ সালে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ফুটবলার তৈরির জায়গায় অনেক সংস্কার করেন। এর ফল পায় ইংল্যান্ড ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতে। পরের বছর তরুণ ও প্রতিভাবান দল নিয়ে তারা গিয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপে। ইংলিশ ইয়ুথ ফুটবল ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমে ১৫ বছর পর্যন্ত নিজের বয়স শ্রেণিতেই খেলতে হবে ফুটবলারদের। এরপর খেলার গুণগত মান ও টেকনিক্যালি উন্নত হলে কেউ দুই বছর ওপরের দলে গিয়ে খেলতে পারে।