দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের জেরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। ২০১২ সালের ওই ঘটনার পর তাত্ক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে উচ্চঝুঁকির বড় প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে আসতে শুরু করে সংস্থাটি। দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতায় বাংলাদেশে অর্থায়ন কৌশলেও বড় পরিবর্তন আনে বিশ্বব্যাংক।
কৌশল বদলালেও অর্থায়ন কমেনি সংস্থাটির। অবকাঠামোর পরিবর্তে দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা, মানব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন সামাজিক খাতে অর্থায়ন করতে থাকে সংস্থাটি। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সম্পর্কের অস্বস্তিও কাটতে থাকে। সম্পর্কেরও উন্নয়ন হতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। বর্তমানে প্রয়োজনের মুহূর্তে বাংলাদেশও ঋণের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংককে।
গত অর্থবছরেও (২০২১-২২) তৃতীয় সর্বোচ্চ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য প্রায় ১৬৭ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। চলতি ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বেশ কয়েকটি ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড। মার্চে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা পৌনে দুই কোটি গরিব কৃষকের আয় বাড়াতে ১২ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিতে বিনিয়োগের জন্য গত জুনের শেষদিকে বাংলাদেশের জন্য ৭৫ কোটি ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। করোনা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলার পাশাপাশি দুর্যোগ ও রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলাসহ ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলায় আরো ৩০ কোটি ডলারের ঋণ দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিষয়টি নিয়ে এ মাসেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটি চুক্তি হয়েছে। আগামী তিন অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে সংস্থাটির কাছে আরো ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে সরকারও এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়েছে। সব মিলিয়ে সংস্থাটি এখন বাংলাদেশে নিজেদের সেরা সময়টি পার করছে।