আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির নেতারা প্রকাশ্য সমন্বয়ের কথা বললেও মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় অস্বস্তিতে আছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, অর্থনীতি বাঁচাতে নেওয়া এ ধরনের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত দলকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম এক ধাক্কায় এতটা বাড়ানো মানতে পারছেন না আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো। তারা মনে সরকার আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে এটা না করলেও পারত। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন নিম্নমুখী সেই সময়ে এতটা না বাড়ালেও চলতো।
ডলার-সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নতুন সিদ্ধান্তে, ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, পেট্রল ১৩০ ও অকটেন ১৩৫ টাকা। জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধিতে শুক্রবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন নেটিজেনরা। তবে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের উত্তর দিতেও দেখা যায়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে সাংবাদিকেরা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের ক্ষোভের বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য জানতে চান। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। বরং এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণেই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবে সারা পৃথিবীতেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় বা বৃদ্ধি একটি অজনপ্রিয় কাজ। অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থেই এই কাজটি করতে হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মনে করেন, দেশের জনগণ বাস্তববাদী, তেলের দাম বাড়ার কারণটা তারা বুঝবে। তিনি বলেন, সরকারতো পরগাছা না। জনগণের ভিত্তি আছে। জনগণও বিষয়টি দেখছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে সবকিছুই মানুষের চোখের সামনে আসে। যারা (বিশ্ববাজার) দাম বাড়িয়েছে, তাদের ওপর মানুষের ক্ষোভ হওয়ার কথা, সরকারের ওপর হবে কেন?
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের দাম সরকারকে বাড়তেই হতো। তবে এক সঙ্গে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়ানো উচিত হয়নি বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য করতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘এক সঙ্গে এত টাকা তেলের দাম বাড়ায় মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। দাম বাড়ানো যেহেতু অবশ্যম্ভাবী ছিল, সে ক্ষেত্রে প্রথমে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়লে মানুষ এতটা ক্ষুব্ধ হতো না। তিন মাস পরে আবারও দামের সমন্বয় করা যেত।’