গত ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের 'ম্যারাথন ডায়ালগ' সমাপ্ত হয়েছে। এর ফলাফলে অনেকেই হতাশ। কারও কারও কাছে এই সংলাপ অর্থহীন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ততটা হতাশ হইনি। সম্ভবত এর কারণ, খোদ আলোচনা নিয়েই খুব বেশি আশাবাদী ছিলাম না।
মহাজন-মহাজ্ঞানীরা বলে থাকেন, হতাশার মাঝেও আশার আলো আছে। সেই আপ্তবাক্য মেনেই একটু খতিয়ে দেখতে চাই হতাশার ঝুড়িতে আশার আলো আছে কিনা।
দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ২৮টি ইসির আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৯টি দল। দুটি দল আলোচনার জন্য নতুন তারিখ চেয়েছে। সংখ্যাবিচারে নিরঙ্কুশ অংশগ্রহণ। তবে ক্ষমতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বর্জনে সংলাপের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। সে যাই হোক; বর্জনকারী দলগুলোর বক্তব্যও কারও অজানা নেই। ওইসব দলের নেতারাও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে দলের অবস্থানই তুলে ধরেছেন।
এখন সব ছাপিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন? দলীয়, না দলনিরপেক্ষ, কিংবা জাতীয় সরকার? অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ নির্বাচনের প্রয়োজনে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। এর মানে এই নয়, সরকার প্রশ্নে রাজনৈতিক সমঝোতার আগে নির্বাচনী বিধি-বিধান প্রণয়ন বা সংস্কার করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক- নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
আশার কথা, বাংলাদেশে যুগোপযোগী নির্বাচনী বিধি-বিধান রয়েছে। তবে তা যথাযথভাবে অনুশীলন না হওয়ায় আশানুরূপ সুফল মিলছে না। যেমন বর্তমান আইনে নির্বাচন চলাকালে পুলিশ-প্রশাসন ইসির ওপর ন্যস্ত হওয়ার কথা। বাস্তবে দেখা যায়, পুলিশ-প্রশাসন সরকারের মুখাপেক্ষী থাকে। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়তে অনুরোধ করা হলেও তা পালিত হয় না। এ ক্ষেত্রে ইসির ক্ষমতা প্রয়োগের সব বাধা দূর করা দরকার।
আলোচনায় এসেছে- রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে কি আগের মতো জেলা প্রশাসকরা থাকবেন, না নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসার হবেন। কেউ কেউ বলছেন, জেলা প্রশাসকরা পুলিশ-প্রশাসন পরিচালনায় সিদ্ধহস্ত। তা ঠিক। তবে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক রাজনীতিক, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের সখ্য থাকে। তাই তাঁদের পক্ষপাত করারও সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তা হবে ইতিবাচক।
আরেক বিতর্ক হচ্ছে ইভিএম নিয়ে। এ ব্যাপারে আগেও লিখেছি। যন্ত্রের কোনো দোষ নেই; মানুষ ঠিক থাকলে সব ঠিক। যেহেতু মানুষ সব সময় ঠিক থাকে না, তাই যন্ত্রকে ত্রুটিমুক্ত করতে হয়। আমাদের ইভিএমের বড় ত্রুটি- এতে ভিভিপিএটি (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) নেই। ফলে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই। ভারতে ইভিএমে ভিভিপিএটি আছে। তারপরও সবাই মানছে না। তাই বাংলাদেশে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া বেশিরভাগ দল এটি চাইছে না। সম্ভবত বেশিরভাগ লোকও ইভিএমের পক্ষে নেই।
জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি প্রভৃতি দল উত্থাপিত একটি প্রস্তাব তেমন গুরুত্ব পায়নি। প্রস্তাবটি হচ্ছে- সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। আমার বিবেচনায় এটি গুরুত্বপূর্ণ। সিপিবি, বাসদসহ কিছু বাম দলও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবি করছে। ১৪ দলের শরিক জাসদের ঘোষণাপত্রেও এই বিধান রয়েছে।