কৃষকদের কেউ নৌকায়, কেউ রিকশা-ভান বা ঘোড়ার গাড়ি, এমনকি মাথায় করে পাট নিয়ে আসেন হাটে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণ ও হাঁকডাকে সরগরম পুরো হাট। পাট কিনে হাট থেকেই দেশের দূরদূরান্তে তা সরবরাহ করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাটের হাটে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর কোল ঘেঁষে এই হাট শুধু মানিকগঞ্জ নয়, সারা দেশের অন্যতম বড় পাটের হাট। ‘ঘিওরের পাটের হাট’ নামেই হাটটি সবার কাছে পরিচিত।
হাটের একাধিক ইজারাদার ও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি হাটেই কোটি টাকার পাট কেনাবেচা হয়। এখানকার পাট নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাটকলে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য নদীভাঙনে দিন দিন হাটের আয়তন কমে আসছে। নদীভাঙন রোধে প্রতিরক্ষামূলক কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তাঁরা।
হাটের ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রতি বুধবার হাট বসে। সে সময় পাশেই ছোটখাটো নদীবন্দর ছিল। মানিকগঞ্জ ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ঢাকা, পাবনাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকায় করে পাট নিয়ে আসতেন কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ঘিওরের পাটের হাটের ইজারাদার পাঁচজন। তাঁদের একজন মো. মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কৃষকেরা বিক্রির জন্য পাট নিয়ে হাটে আসেন। এ অঞ্চলে মূলত তোষা সাদা জাতের পাটের আবাদ বেশি হয়। গত হাটে ৮০ টনের মতো পাট বেচাকেনা হয়। মানভেদে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
হাটে বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন মো. আলাউদ্দিন, গৌরাঙ্গচন্দ্র বিশ্বাস, গোকুলচন্দ্র বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে গোকুলচন্দ্র বিশ্বাস ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই হাটে পাট কেনাবেচা করছেন। তিনি বলেন, হাটে খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে ৩০০ মণ পাট কিনেছেন। এসব পাট নারায়ণগঞ্জে পাঠাবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মানিকগঞ্জে গত বছরের তুলনায় ২৩৮ হেক্টর বেশি জমিতে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে। এ বছর কৃষকেরা ৩ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেন। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ২১৭ মেট্রিক টন।