যা ঘটে প্রকৃত ঘটনা তা নাও হতে পারে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে প্রতিদিন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উচ্ছ্বাস এখন উৎকণ্ঠায় পরিণত হয়েছে, ফলে আশ্বাস দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে সরকারি মহল থেকে। কোনো সমস্যা নেই, পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে, তিন মাসের খাদ্য আমদানির মতো রিজার্ভ আছে এ রকম আশ্বাস যেমন দেওয়া হচ্ছে, তেমনি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে এই বলে, আগে কখনো কি এত রিজার্ভ ছিল? আর তুলনামূলক কথা বলতে পছন্দ করা কর্তারা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে এত দিন চলার মতো রিজার্ভ নেই, আমরা ভালো আছি ইত্যাদি।
কিন্তু মানুষ দেখছে ডলারের বাজার চড়া, প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। বাজারে ১১২ টাকা পর্যন্ত উঠেছে ডলারের দাম। সরকারি দাম আর বাজারে বিক্রির মধ্যে ১৫ টাকার মতো পার্থক্য বলে ডলার নিয়ে ব্যবসাও হচ্ছে নানাভাবে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে, বড় বড় গাড়ি কিনতে, বিলাসবহুল বাড়ির সরঞ্জাম কিনতে, ঈদ-পার্বণে বিদেশে শপিং করতে, খিচুড়ি রান্না বা পুকুর খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করতে হলে ডলার লাগবে। কিন্তু আমাদের দেশে ডলার আসে কীভাবে? একটা পথ হলো রপ্তানির মাধ্যমে, অন্যটা প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। আর ডলার প্রধানত খরচ হয় আমদানি করতে গিয়ে। আমাদের দেশে প্রধানত গার্মেন্টসের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, খাদ্য, গাড়ি আমদানি করতে ডলার খরচ করতে হয়। এই আমদানি-রপ্তানির ঘাটতিকে বলা হয় ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি। একটা সাধারণ হিসাব করে দেখা যাক! বলা হয়েছে, আমরা রপ্তানি করেছি ৫২.৫ বিলিয়ন ডলার, আর আমদানি করেছি ৮৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ কমবেশি ৩৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি আছে। প্রবাসী শ্রমিকরা পাঠিয়েছেন ২২ বিলিয়ন ডলার। তাহলে সবশেষে ঘাটতি দাঁড়াল ১৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে রিজার্ভে তো টান পড়বেই।