আফগানিস্তানের কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল–জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে ২০১১ সালে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে মনে হতে পারে। এক দশকের বেশি সময় ধরে জাওয়াহিরি আল-কায়েদা পরিচালনা করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর সংগঠনটি যাতে ঠিকমতো চলতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ তিনি করে গেছেন। নাইন–ইলেভেন হামলার মূল সংগঠকদের একজন আয়মান আল-জাওয়াহিরি। তাঁকে হত্যা করতে পারা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের জন্য নিঃসন্দেহে বড় একটা সফলতা। কিন্তু এ হত্যার মধ্য দিয়ে আল-কায়েদা খুব বেশি দুর্বল হবে না।
প্রকৃতপক্ষে শীর্ষ নেতাকে এভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হত্যার ঘটনা আল-কায়েদার ওপর খুব সামান্যই প্রভাব ফেলতে পারবে। আল–জাওয়াহিরি ছিলেন পর্দার অন্তরালে থাকা নেতা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা ছিল সামান্য। সাংগঠনিক কাজের দক্ষতাসম্পন্ন যে কাউকে তাঁর বিকল্প হিসেবে নেতা বানিয়ে দেওয়া সম্ভব। সম্ভবত জাওয়াহিরির মতো আমলাতান্ত্রিক দক্ষতাসম্পন্ন নেতার পরিবর্তে একজন চৌকস এবং সংগঠনে উদ্দীপনা তৈরি করতে পারেন—এমন কাউকে নেতা হিসেবে বেছে নিতে পছন্দ করবেন আল-কায়েদার বেশির ভাগ সদস্য।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাবুলে এ ড্রোন হামলা তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে ওয়াশিংটন কোনো ড্রোন হামলা চালাতে গেলেও অসুবিধার মুখে পড়বে। তবে এটা ভাবা ঠিক হবে না, এই হামলা আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার ক্ষেত্রে বড় বাঁকবদল ঘটাবে। একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর নেতার মৃত্যুর পর সেই সংগঠন কতটা টিকবে, তা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সংগঠন পরিচালনা পদ্ধতি, টেকসই মতাদর্শ ও জনসমর্থন। তিন ক্ষেত্রেই আল–কায়েদা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
প্রথমত, সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে আল-কায়েদার। আল– জাওয়াহিরি তাঁর পূর্বসূরিদের মতো চৌকস নেতা ছিলেন না। কিন্তু লাদেনের মৃত্যুর পর তিনি একটি বিস্তৃত এবং স্বনির্ভর আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সংগঠনে খুব স্পষ্ট একটা নেতৃত্ব-শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনের ভাগ্য একক কোনো নেতার ওপর যেন নির্ভরশীল না থাকে, সেটা নিশ্চিত করেছেন তিনি। আল–জাওয়াহিরির আমলে আল-কায়েদা এমন একটি সাংগঠনিক মডেল বেছে নিয়েছে, যেটিকে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’ বলাটাই সবচেয়ে ভালো হবে। তাঁর নেতৃত্ব আল-কায়েদা মালি থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত একই ধরনের মডেলে বিস্তার লাভ করেছে। আল-কায়েদার যেকোনো শাখা অনেক বেশি স্বশাসিত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এসব শাখা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে ও কাজ করতে সক্ষম। সে কারণে একজন নেতার মৃত্যুতে আল-কায়েদার নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়বে, সেটা ভাবা ঠিক হবে না।