বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বর্তমান সময়টা ভালো যাচ্ছে না কোনোভাবেই। ২০২০-২১ সালের করোনার ধাক্কায় সমগ্র বিশ্ব ছিল যারপরনাই পর্যুদস্ত। ১৯২৯ সালের মহামন্দার পর থেকে অর্থনীতিতে এত বড় আঘাত আর আসেনি। এর আগে ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক মন্দা সম্পদ ও ব্যবসার প্রভূত ক্ষতি করেছে। তবে আর্থিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয় উন্নত দেশে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত অনেক দেশ, যাদের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে কম, আর্থিক মন্দার কবল থেকে নিজেদের অনেকটাই সুরক্ষিত রাখতে পেরেছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব ছিল সমান্তরাল ও অভাবনীয়। করোনার এ নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব যখন উন্মুখ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই পুনরুদ্ধারের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে অনেকটাই। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ‘মূল্যস্ফীতি’ নামক এক অর্থনৈতিক খড়্গ আরোপ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সবার ওপরে রয়েছে মূল্যস্ফীতি।
বিশ্বের ধনী দেশগুলোর ক্লাব, ওইসিডির বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি প্রবৃদ্ধির এ হার তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। নেদারল্যান্ডসে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। তুরস্কের মূল্যস্ফীতি এখন অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে, ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্কিন অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সম্প্রতি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। ইউরো অঞ্চলের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতিও লক্ষ্যের তুলনায় অনেক বেশি। এস্তোনিয়ার মূল্যস্ফীতি এরই মধ্যে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ, যা ১৯৮০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। জার্মানির মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। জাপান যেখানে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে ডিফ্লেশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই ৬ শতাংশের বেশি। বিবিএসের হিসাবে এখন তা ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার সরকারি হিসাবের তুলনায় একটু বেশিই হবে বৈকি। কারণ মূল্যস্ফীতি হিসাব করতে যে খাদ্য ঝুড়িকে বিবেচনা করা হয়, তা অনেকটাই সেকেলে। এরই মধ্যে মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়েছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হিসাবে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয় না।