সংবিধান অনুযায়ী, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য। সমাজতন্ত্র, যেটি অনেক আগেই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতার পর যে বিষয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। গণতন্ত্রকেও প্রায় বাতিলের খাতায় ফেলতে যাচ্ছি। সবশেষ ধর্মনিরপেক্ষতা—আমরা এখনো জানিই না কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করতে হয়। আদর্শ হিসেবে পছন্দের হলেও আমাদের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ কখনোই পরিষ্কার হয়নি— কীভাবে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে এর অর্থ দাঁড় করাতে হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়ভাবে লেগে থাকার মতো আন্তরিকতা বা সাহস কোনোটাই আমাদের ছিল না। অনেক সময় আমরা এ বিষয়ে বড় বড় বুলি আওড়েছি। কিন্তু, যখন ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা কোনো না কোনো অজুহাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তখন আমরা চোখ-কান বন্ধ রেখেছি।
ধর্মীয় সহিংসতা—সাধারণভাবে যাকে বলা হয় সাম্প্রদায়িকতা। দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমানের মতবিরোধ মীমাংসা ও সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য দেশভাগ হয়েছিল। তবে, পাকিস্তান কখনোই সাম্প্রদায়িকতার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি। বস্তুত, কখনো সে চেষ্টাই করা হয়নি। ভারত আবারও গভীরভাবে এ সমস্যায় নিমজ্জিত হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে—বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমরা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। বর্তমানে এই বাংলাদেশের রয়েছে প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার গল্প।