মহামারী করোনা উত্তরকালেও স্পষ্ট হচ্ছে বিশ্বের সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে বিশ্বের ৮২ ভাগ সম্পদের মালিক ধনিক শ্রেণিভুক্ত মাত্র একভাগ মানুষ। ধনকুবেরদের সুরতহাল প্রতিবেদনে আভাস মিলছে, বিশ্বের বেশিরভাগ সম্পদও গুটিকয়েক পরিবারের হাতে। পুঁজিবাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বল্গাহীন বিকাশের কারণে একই ধরনের সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার আওতায় থেকেও মানুষে মানুষে ব্যাপক পার্থক্য এবং শোষণ ও বঞ্চনাবোধের মনোজাগতিক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়েই নতুন মানবিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণবাদের বিস্তৃতি ঘটেছিল তা শেষ পর্যন্ত বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করেছিল। অতঃপর উত্তর আমেরিকায় ব্রিটিশ কলোনির বিরুদ্ধে গণজাগরণ, গৃহযুদ্ধ ও মার্কিন গণতন্ত্রের যে মাইলফলক সূচিত হয়েছিল তা বিশ্বের রাজনৈতিক ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দেয়। আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষ আর মেশিন, মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি আর মেশিনের কার্যক্ষমতার মধ্যে ঠা-া যুদ্ধের সূত্রপাতই শুধু ঘটাবে না, সেই যুদ্ধে মানুষ যে দক্ষতা ও পারঙ্গমতা দেখাবার হিম্মত রাখে তাকে কাবু করার কাজ করোনা করেই চলেছে। দেশে-বিদেশে সৃজনশীল শিল্পোদ্যোক্তাদের করোনায় মৃত্যুর মিছিল দেখলে তা বোঝা যায়।
অর্থব্যবস্থাকে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা এবং পুঁজির পুঞ্জীভবন দ্বারা করপোরেট অর্থনীতির জয়যাত্রা সূচনার ধারক ও বাহক হচ্ছে রাজনৈতিক অর্থনীতির আধুনিকতম এজেন্ডা। মূলত এবং মুখ্যত রাজনীতি ও অর্থনীতি এ দুয়ের মধ্যে এখন কে বড় কে ছোট, কে কার দ্বারা কতখানি প্রভাবিত, উদ্বুদ্ধ কিংবা পরিচালিত হয় বা হচ্ছে তা আজও বিশ্বব্যাপী কোথাও খোলাসা করা সম্ভব হয়নি। কেননা যুগে যুগে স্থান, পাত্র ও প্রক্রিয়াভেদে অর্থনীতি ও রাজনীতি অধিকাংশ সময় অনিবার্যভাবেই সমতালে ও সমভাবনায় এগিয়ে চলছে। সে কারণে প্রায়শ মনে হয়েছে বড্ড পরস্পর প্রযুক্ত এরা। যেন দুজনে দুজনার। যদিও অনেক সময় এটাও দেখা গিয়েছে রাজনীতি অর্থনীতিকে শাসিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করেছে; আবার অর্থনীতি রাজনীতিকে অবজ্ঞার অবয়বে নিয়ে যেতে চেয়েছে বা পেরেছে। গত শতকে রাজনৈতিক অর্থনীতির ধারণা বেশ ব্যাপ্তিলাভ করে।