সমকাল: আপনার ৮৭তম জন্মদিনে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জন্মদিনের অনুভূতি একটু বলুন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ধন্যবাদ। জন্মদিন পালনে আমি কিন্তু আগ্রহী নই। আগে এ বিষয়ে খেয়ালই করতাম না- জন্মদিন এলো, না গেল। এখন করি। প্রধান কারণ শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা; দ্বিতীয় কারণ বয়স বাড়া। বয়স বাড়লে মানুষ পেছনের কথাই বেশি করে ভাবে। আমিও ভাবছি। বিশেষভাবে মনে পড়ছে আপনজনের কথা, যাঁরা চলে গেছেন। মনে পড়ছে অনেক সুখের স্মৃতিও। দুয়ে মিলে অনুভূতিটা মিশ্র।
সমকাল: দীর্ঘ কর্মজীবনের তৃপ্তি-অতৃপ্তি কিছু আছে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তৃপ্তি এটা, আমি যা করতে চেয়েছিলাম, তা করতে ত্রুটি করিনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি মোটেই অনুকূলে ছিল না; বিরূপই বলতে হবে। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পাওয়া যায়নি; অধিকাংশ সময়ে বৈরিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কাজ অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার মূল কাজটা ছিল সাংস্কৃতিক। সেখানে আমার ভূমিকা নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। তবে কাজে ছিলাম- এটা ভেবে আনন্দ পাই। অতৃপ্তি এখানে যে, কাজ আরও সুচিন্তিতভাবে করা দরকার ছিল। কর্মের সঙ্গে চিন্তার সংযোগ আরও গভীর হতে পারত।
সমকাল: একটা সময় ছিল, যখন আপনার বই পড়ে তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হতো। পরিস্থিতি কি এখনও তেমন আছে?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ওটি ছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়। তখন প্রগতিশীল চিন্তার খুব দরকার ছিল। তরুণরা সরবরাহ চাইছিল। সেটা পাচ্ছিল না। বুদ্ধিজীবীদের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন; কেউ কেউ আবার সুবিধাপ্রাপ্তির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বড় একটা ধাক্কা এসেছিল সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের বিভাজন থেকে। সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমি লিখছিলাম সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। সামন্তবাদ ছিল সংস্কৃতিতে; পুঁজিবাদ এসেছে অর্থনীতিতে এবং সে কারণে সংস্কৃতিতেও। তরুণরা ওই ধরনের লেখা চাইছিল। পরিস্থিতি এখন আর তেমন নেই। মূল কারণ পুঁজিবাদ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি চতুর, দক্ষ ও নৃশংস। জ্ঞানচর্চাকে নিরুৎসাহিত করছে; উৎসাহিত করছে ভোগবাদিতাকে। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন গড়ে ওঠার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। তরুণদের সঙ্গে মিলবার; মিলবার মতামত বিনিময় করার সুযোগগুলো সংকুচিত হয়ে গেছে।