এ দেশের যে কোনো বিপদ-আপদে দুর্নিবারের মতো এগিয়ে এসেছে তরুণ-যুবারা, শ্রমিক-খেটে খাওয়া মানুষ, আপামর জনগণ। সেটি রাজনৈতিক সংকট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক। সর্বশেষ গোটা করোনাকালে মানুষের সহায়তায় টিকেছিল মানুষ। অল্প বয়সে মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসের দেখার সুযোগ হয়েছিল আটানব্বইয়ের দেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যায়। চট্টগ্রাম শহরের পাড়ায় পাড়ায় গলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে তরুণ দলের ত্রাণ সংগ্রহের তুমুলযজ্ঞ এখনও আলোড়িত করে। তাদেরকে দেখে মনে হতো নজরুলের কবিতার সেই ‘অগ্রপথিক’-কে: ‘প্রাণ-চঞ্চল প্রাচী-র তরুণ, কর্মবীর,/ হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির!’
পরবর্তীতে আমরাও উত্তরবঙ্গের বন্যায়, ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড বাঁশখালীর উপকূলে, রাঙামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় কিংবা গণহত্যার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে কখনও ত্রাণ নিয়ে কখনও ওষুধপত্র নিয়ে কখনও শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম, নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনের পর দিন ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখেছি আমাদের বন্ধুদের। চট্টগ্রাম শহরে পাহাড়ধস থেকে শুরু করে বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ছুটে যেতে এক মুহূর্তও দ্বিধাগ্রস্ত মনে হতো না তাদের। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও; শুধু তরুণ-যুবারা নয়, আপামর জনগণ। অনেক দিন পর চট্টগ্রামে মানুষের আরেক মানবিক স্ফুলিঙ্গ দেখলাম আমরা।
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে যেভাবে মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানুষের ছুটে গেল, তা এক কথায় অভাবনীয়। আগুনের ফুলকির মতো জেগে ওঠা যাকে বলে। সিভিল সার্জন অসহায় হয়ে আবেদন জানালেন, সাথে সাথেই শহরের অসংখ্য চিকিৎসক ও নার্স ছুটে গেলেন হাসপাতালে। ফায়ার সার্ভিস আবেদন জানাল, শত শত অ্যাম্বুলেন্সে ছুটে গেল সীতাকুণ্ডের ডিপোতে। হতাহতদের চাপে হাসপাতাল জায়গা হচ্ছিল না, তাদের জায়গা ছেড়ে দিল অন্য রোগীরা, জড়াজড়ি করে বারান্দার মেঝেতে আশ্রয় নিল তারা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও বিনা মূল্যে চিকিৎসা খরচের ঘোষণা দিয়ে দিয়ে ডেকে নিল হতাহতদের।