‘দেয়ালের ভেতর গর্ত’ কথাটি আসলে স্বশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত নিরীক্ষার নাম ‘হোল ইন দ্য ওয়াল’–এর বাংলা অনুবাদ। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৯ সালে। দিল্লিতে বসবাসকারী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার বাঙালি অধ্যাপক শ্রী সুগত মিত্র একদিন ভাবলেন, বাচ্চারা কি নিজে নিজে কম্পিউটার শিখতে পারবে? বিষয়টা বোঝার জন্য তিনি তাঁর অফিসের পাশে একটা বস্তির দেয়ালে গর্ত করে তাতে ইন্টারনেটের সংযোগসহ কয়েকটা কম্পিউটার গেঁথে দিলেন, পরে যা ‘হোল ইন দ্য ওয়াল’ নামে পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, বস্তির ৮-১২ বছরের যেসব বাচ্চা জীবনে কখনো কম্পিউটার দেখেনি এবং কম্পিউটার যে ভাষায় চলে, সেই ইংরেজি ভাষাও যাদের অজানা, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেরাই কম্পিউটার চালানো কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা শিখে গেল।
‘এটা আর এমন কী!’ শ্রী মিত্রের সহকর্মীরা বললেন, ‘দেখো, আশপাশে হয়তো কম্পিউটার চালাতে জানা কোনো ছেলে-ছোকরা ছিল, সে–ই ওদের শিখিয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু পরে যখন সুগত রাজস্থানের মরুভূমি কিংবা দক্ষিণ ভারতের গন্ডগ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে একই কাজ করলেন, তিনি দেখলেন, ওখানকার বাচ্চারাও দিল্লির ছেলেমেয়েদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
শ্রী মিত্র এবার হায়দরাবাদে গেলেন। দেখলেন ওখানে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি উচ্চারণ খারাপ। ভাবলেন, ওরা নিজেরা নিজেদের চেষ্টায় বোধগম্য ইংরেজি বলাটা আয়ত্ত করতে পারে কি না, দেখা যাক। তিনি ওদের কম্পিউটারের সঙ্গে একটা সফটওয়্যার দিলেন যাতে কেউ ব্রিটিশ উচ্চারণের কাছাকাছি উচ্চারণে কোনো কথা বললে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার স্ক্রিনে টাইপ হয়ে যায়। ইংরেজি শেখার দায়িত্বটা ছেলেমেয়েদের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি চলে এলেন। দুই মাস পর তিনি গিয়ে দেখেন যে তখন কম্পিউটার ওদের ইংরেজি উচ্চারণ পরিষ্কার বুঝতে পারছে।
এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে একসময় নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক পেলেন। তারা তাঁকে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেড় মিলিয়ন পাউন্ড দিল; কিন্তু তার সঙ্গে ছুড়ে দিল নতুন চ্যালেঞ্জ—সুগতর এই পদ্ধতিতে কি বাচ্চারা বায়োটেকনোলজির মতো বিষয় শিখতে পারবে? সুগত চ্যালেঞ্জটা নিলেন। এবার একেবারে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রথাগত গবেষণা। কন্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে ঠিক করা হলো দিল্লির একটা নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের আর এক্সপেরিমেন্টাল গ্রুপ করা হলো দক্ষিণ ভারতের পদুচেরির গ্রাম কালিকুপ্পুমের বাচ্চাদের।