গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক কিংবা কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা বিভিন্ন সময় ঘটেছে। তবে এবারের সংঘর্ষ দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে এবং এ সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে, প্রাণ গেছে দুই জনের যা একেবারেই কাম্য নয়। তবে এ ধরনের সংঘর্ষ কেন ঘটছে এবং দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কি হতে পারে সেই বিষয়ে বিভিন্ন মহলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দোকানের কর্মচারীকে মেরেছে-এই মর্মে একটি মিথ্যা তথ্য ছাড়িয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরাও ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পুলিশ চেষ্টা করেছে দুই পক্ষের মধ্যে দাঁড়িয়ে উভয় পক্ষকে নিভৃত করবার। যদিও শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে পুলিশের প্রতি একপেশে আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। ভিডিও ফুটেজের ওপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা গেছে দুই দোকানের কর্মচারীর মধ্যে দ্বন্দ্বের পরে সেই কর্মচারীরাই ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থীকে এই সংঘর্ষে লিপ্ত করেছে এবং পরবর্তীতে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করে।
নাহিদের বাবা-মা অত্যন্ত দরিদ্র। উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তাদের কি হবে কিংবা তারা কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে-এ বিষয়টি কি বিবাদে জড়ানো অংশগ্রহণকারী কোন পক্ষই চিন্তা করবে? নাহিদের মৃত্যুই একমাত্র মৃত্যু নয়। আমরা এর আগেও বিভিন্ন সংঘর্ষে পথচারীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছি।
সংঘর্ষ কিছুটা স্তিমিত হলে প্রশাসনের বিভিন্ন পক্ষের হস্তক্ষেপে প্রথম দিন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় সেই স্থান পরিদর্শন করে সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি ঠাণ্ড করবার চেষ্টা করেছেন। পরিস্থিতি যেন আরো খারাপের দিকে না যায় সে কারণেই ঢাকা কলেজের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে বলা হয়েছিল যে তারা হল ছাড়বে না এবং যে কোনো মূল্যে তারা হলে অবস্থান করবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এই ঘটনার জের হয়তো সাময়িকভাবে প্রশমিত করা যেত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সমাধান নয়। উভয় পক্ষ যদি তাদের সহাবস্থান বজায় না রাখে তাহলে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি। সেই এলাকাগুলিতে যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না চলে তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি হবে। আবার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যে বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা যে পরিমাণ অর্থ আয় করে শিক্ষার্থীরা যদি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদের সে আয় বন্ধ হয়ে যাবে। অতএব উভয় পক্ষেই যদি সমঝোতার ভিত্তিতে সহাবস্থান নিশ্চিত না করে তাহলে এই ধরনের অশান্তি চলতেই থাকবে।
তবে সাধারণ চোখে ঘটনাকে শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও এর পেছনে কোন শক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। দুইটি দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষের পরে কেনইবা একটি পক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের তাদের পক্ষে নিয়ে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত করলো এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। এটি একেবারেই কাকতালীয়, না এই ঘটনার অন্তরালে অন্য কোন ঘটনা রয়েছে- এটি স্পষ্ট করা অত্যন্ত প্রয়োজন।